সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কাঁঠালবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমান (৬৩) একজন কৃষক। চলতি বছর প্রায় চার একর জমিতে ধানের চাষ করেছিলেন। পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় প্রথম দফায় বোরো ধান এবং সর্বশেষ তৃতীয় দফায় আমন ধানের ফসল তলিয়ে যায়। পাশাপাশি বন্যার পানিতে হাবিবুরের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিন দফা বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া হাবিবুর প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবার পশু কোরবানি দিতে পারছেন না। এ কষ্ট এখন তাঁকে ভোগাচ্ছে। পরিবারেও নেই ঈদের আমেজ।
হাবিবুরের মতো অবস্থা বন্যাকবলিত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার অনেকেরই। তাই পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে এলেও অনেক বাড়িতে নেই উৎসবের আমেজ। ভয়াবহ বন্যায় সম্বল হারানো বেশ কয়েকজন বানভাসি জানিয়েছেন, বন্যায় কারও ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, কারও ফসল ডুবেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, ডুবে গেছে দোকানপাট। অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় এখন মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লড়াই করছেন। এ অবস্থায় টাকার অভাবে বিশেষত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অনেকেই পশু কোরবানি দিতে পারছেন না। এমনকি যাঁরা আগের বছরগুলোতে একাধিক পশু কোরবানি দিয়েছিলেন, এবার তাঁরাও কম পশু কোরবানি দেবেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বলেন, গ্রামে ১৪০টি পরিবারের বাস। বন্যার পানি প্রতিটি বাড়িতে কোমর থেকে গলা পর্যন্ত ছিল। অধিকাংশ ঘরই ধসে পড়েছে। সবার আসবাব, পোশাকসহ যাবতীয় সামগ্রী ভেসে গেছে। গ্রামটিতে কারোরই কোরবানি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।
চলতি বছর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় তিন দফায় ও জেলার বাকি ১০টি উপজেলায় দুই দফায় বন্যা হয়। সরকারি হিসাবে জেলায় ৪০ হাজার ৪১টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৩০ লাখ। গত ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এখনো অন্তত ৪০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত।
সিলেট সদর উপজেলার জাঙ্গাইল গ্রামের ব্যবসায়ী হায়দার রুবেল (৪০) বলেন, গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। এ বছর দুই দফায় হওয়া বন্যা তাঁকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে। আর্থিকভাবে তিনি খুবই করুণ অবস্থায় আছেন। তাঁর মতো গ্রামের অনেকেরই একই অবস্থা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং প্রথম আলোকে বলেন, জেলার মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। এ উপজেলার অনেকেই কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ঈদের দিন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এবং স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বন্যাকবলিত দরিদ্র এলাকায় পশু কোরবানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।