কিশোরগঞ্জের ভৈরব ট্রমা সেন্টারে টিকা নিচ্ছেন ইউএনও লুবনা ফারজানা
ফাইল ছবি

আরাফাত রকি কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী। করোনার টিকা পেতে নিবন্ধন করেন গত ২৯ জুলাই। এরপর থেকে টিকা গ্রহণের তারিখ জানতে প্রতিদিন তিনি খুদে বার্তার অপেক্ষায় ছিলেন। বার্তা পেলেন বটে। তবে অপেক্ষায় থাকতে হয় ১৮ দিন। লম্বা সময় পেরিয়ে আরাফাত গত মঙ্গলবার টিকা গ্রহণ করতে পেরেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরাফাতের অপেক্ষার পালা শেষ হলেও এখনো খুদে বার্তা পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন ১৪ হাজার ৫১৫ জন। প্রতিদিন নিবন্ধনের সংখ্যা আগের দিনের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, বর্তমান গতিতে এগিয়ে গেলে নিবন্ধনের পর টিকা পেতে দেড় মাসের বেশি সময় লেগে যেতে পারে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারি অন্যান্য বন্ধের দিন টিকা দেওয়া বন্ধ থাকছে।

দিনে খুদে বার্তা পাঠানো হচ্ছে ৫০০ জনকে। এর মধ্যে অর্ধেক আছে প্রথম ডোজ ও অর্ধেক আছে দ্বিতীয় ডোজের খুদে বার্তা। নিবন্ধিত ১৪ হাজার ৫১৫ জন কেবলই প্রথম ডোজের জন্য।

আরাফাত বলেন, ‘অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। সঙ্গে হতাশাও কাজ করত। সুই পুশ হওয়ার পর বিশ্বাস হলো আমি টিকা দিতে পেরেছি।’

খুদে বার্তার অপেক্ষায় থাকা টিকাপ্রত্যাশীদের ধৈর্যচ্যুতির তথ্যটি স্বাস্থ্য বিভাগও ভালো করেই জানে। তবে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে সমস্যা সমাধানে এত দিন কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছিল না তারা। বর্তমানে ওই সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে বিভাগটি। খুদে বার্তার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে তারা। কাল সোমবার থেকে উদ্যোগটি কার্যকর হওয়া কথা রয়েছে। উদ্যোগ কার্যকর হলে কাল থেকে ৫০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার নিবন্ধিত ব্যক্তির মুঠোফোনে টিকা গ্রহণের খুদে বার্তা যাবে।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, আক্রান্ত, মৃত্যু ও নমুনা প্রদানের শতকরা সূচকে জেলার শীর্ষে ভৈরব। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৩৮ জন। মারা গেছেন ৪১ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৬ জন। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯৬ জন। এখানে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন প্রায় ২৮ হাজার জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৯ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ৬০০ জন নিবন্ধন করছেন। টিকা দেওয়ার একমাত্র কেন্দ্র ভৈরব ট্রমা সেন্টার।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ভৈরবের নিবন্ধন–জট কমাতে হলে প্রথম প্রয়োজন টিকার প্রাপ্তি বাড়ানো। একই সঙ্গে কেন্দ্র বাড়ানো। তবে টিকার প্রয়োজনীয় প্রাপ্তিযোগ ঘটলেও একটি কেন্দ্র দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ভৈরব ট্রমা সেন্টারটি একই সঙ্গে করোনা ব্যক্তিদের আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই সেন্টারেই নেওয়া হচ্ছে নমুনা। ফলে দিনে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা অধিক হয়ে গেলে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হবে। সেই ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই কেন্দ্র বাড়ানোর বিকল্প নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘টিকা নেওয়া নিয়ে মনে ভয় কাজ করত। টিকা না নিয়ে পারা যায় কি না, এমন চিন্তা করে লম্বা সময় পার করেছি। শেষে বন্ধুদের উৎসাহে নিবন্ধন করলাম দুই সপ্তাহ আগে। এখনো খুদে বার্তা পাইনি। অপেক্ষার সময় যেন শেষ হচ্ছে না।’

গড়ে দুই সপ্তাহ অপেক্ষার পরও খুদে বার্তা না পাওয়া কয়েকজন জানান, ‘সকাল–বিকেল মুঠোফোন দেখি। ঘুমানোর আগেও চোখ যায়। বার্তা আসার শব্দ পেলেই নজর যাচ্ছে। গিয়ে দেখছি অন্য বার্তা, টিকার নয়। এতে মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. খুরশীদ আলম। তিনি উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব। টিকা নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের আগ্রহে তুষ্ট হলেও দীর্ঘ অপেক্ষার বিষয়টিতে বিব্রত তিনি।

খুরশীদ আলম বলেন, ‘সবকিছু ঠিকঠাকমতো শেষ করতে হলে দিনে ৫০০ জনের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যাচ্ছিল না। আবার লোকজনও অপেক্ষা করতে চাইছেন না। এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি। এ অবস্থায় এখন আমরা দিনে টিকা দেওয়ার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাল থেকে নিবন্ধিত ব্যক্তিরা সিদ্ধান্তটির সুবিধা পেতে শুরু করবে।’

টিকার জন্য দিনে অধিকসংখ্যক লোককে এক কেন্দ্রে আনাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বর্তমানে সবকিছু ঠিক রেখে এক হাজার ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া সম্ভব। তারপরও বিকল্প কেন্দ্রের চিন্তা মাথায় রয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা। তিনি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি। লুবনা ফারজানা বলেন, ‘আক্রান্ত, মৃত্যু ও নমুনা—এই তিন সূচকে শুরু থেকেই জেলায় ভৈরব এগিয়ে আছে। এই বাস্তবতা মোকাবিলা করতে টিকার বিকল্প দেখছি না। অপেক্ষার সময় কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেই চিন্তা মাথায় রয়েছে।’