ভৈরবে দুই ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি

সচেতনতাই পারে ট্রেনে পাথর বা ঢিল ছোড়া বন্ধ করতে
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ১১ দিনের ব্যবধানে দুটি আন্তনগর ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এমনকি দুটি ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলাও হয়নি। এতে করে ট্রেনে পাথর ছোড়া দুর্বৃত্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভৈরবে সর্বশেষ দুটি দুর্ঘটনার মধ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তরা পাথর ছুড়ে মারে। ভৈরব স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছাকাছি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে জানালার কাচ ভেঙে ট্রেনচালকের সহকারী কাউসার আহমেদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই ঘটনার ১১ দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ঢাকাগামী আন্তনগর এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরে মমতাজ মারুয়া নামের এক যাত্রী আহত হন। প্রথম ঘটনাটি ঘটার পর এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনার পরও ২৩ দিন কেটে গেছে।

এ ব্যাপারে ভৈরব রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার নুর নবী বলেন, পাথর ছোড়ার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব রেলওয়ে পুলিশের বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে তিনি বলেন,পাথর আগ্রাসনরোধে রেলওয়ের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পাথর ছোড়া যে অপরাধ, সেই তথ্য ট্রেনের কামরায় লেখা আছে। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তবে এসব বিজ্ঞাপন দুর্বৃত্তদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় বলে মনে হয় না। আবার পৌঁছালেও তাদের স্পর্শ করে না।

করোনাকালে বেশির ভাগ সময় রেল চলাচল বন্ধ থাকায় চলতি বছরে তুলনামূলকভাবে পাথর ছোড়ার ঘটনা কম। তবুও চলতি বছরে ভৈরব রেলওয়ে থানা এলাকার মধ্যে ২০টি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

ভৈরব পৌর শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক আগে থেকে ট্রেনে পাথর ছোড়ার কথা শুনে আসছি। অনেক মানুষের অসহায়ত্ব দেখছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপরাধীদের শনাক্ত করা গেছে কিংবা এই অপরাধে কেউ শাস্তি পেয়েছেন—এমন তথ্য কানে আসেনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব রেলওয়ে থানা এলাকার মধ্যে টঙ্গী, পূবাইল, নরসিংদী ও ভৈরব এলাকায় পাথর ছোড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। মূলত এসব এলাকার নির্জন স্থান থেকে পাথর ছোড়া হয়। বয়সে তরুণ, ছিন্নমূল ও মাদকাসক্ত লোকজন এই অপরাধ করছেন বলে দাবি করছেন স্থানীয় লোকজন। পাথর ছুড়ে মারার মধ্যে দুর্বৃত্তরা একধরনের মানসিক আনন্দ পেয়ে থাকে বলে ধারণা স্থানীয় লোকজন।

এই ব্যাপারে পুলিশের কোনো দায় নেই। কেউ মামলা করতে না এলে কী আর করার আছে।
ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস, ওসি, ভৈরব রেলওয়ে থানা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে বেশির ভাগ সময় রেল চলাচল বন্ধ থাকায় চলতি বছরে তুলনামূলকভাবে পাথর ছোড়ার ঘটনা কম। তবুও চলতি বছরে ভৈরব রেলওয়ে থানা এলাকার মধ্যে ২০টি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এই অপরাধ বন্ধে একসময় রেলওয়ে পুলিশ অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে গিয়ে সভা করত। জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে কমিটিও করা হতো। পাথর ছোড়া রোধে কমিটির সদস্যরা মাঠপর্যায়ে ভূমিকা রাখতেন। কিন্তু বর্তমানে এমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না বলে জানান স্থানীয় লোকজন।

এসব ঘটনায় মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাসের বলেন, ‘এই ব্যাপারে পুলিশের কোনো দায় নেই। কেউ মামলা করতে না এলে কী আর করার আছে।’ তবে এসব ঘটনায় মামলা না হলেও অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারে রেলওয়ে পুলিশ সবসময় তৎপর আছে বলে জানান তিনি।