ভৈরব উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন আজ, নেতা–কর্মীদের আগ্রহ কম

সম্মেলন উপলক্ষে পুরো উপজেলা পোস্টার–ব্যানারে ছেয়ে গেলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সম্মেলন নিয়ে আগ্রহ কিছুটা কম দেখা গেছে
ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘ অপেক্ষার পর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজ শনিবার বিকেল চারটায় উপজেলার জিল্লুর রহমান পৌর মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উপলক্ষে পুরো উপজেলা পোস্টার, ব্যানার আর তোরণে ছেয়ে গেলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সম্মেলন নিয়ে আগ্রহ কিছুটা কম দেখা গেছে।

আজ বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সম্মেলন উদ্বোধনের কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটা করে সম্মেলন আয়োজন করা হলেও নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে, উপজেলা ও পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কেউ আগ্রহ দেখাননি। ফলে সম্মেলনের আগেই সম্ভাব্য নেতৃত্ব সম্পর্কে কর্মী-সমর্থকেরা আভাস পেয়েছেন। তাই সম্মেলন নিয়ে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তেমন উছ্বাস দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে কমিটির আগ্রহী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা অনেকটাই ফেসবুককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রার্থী হিসেবে দুই কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবদের নাম দেখা যাচ্ছে বেশি। ব্যানার-পোস্টারেও দুই কমিটির চার নেতার ছবি শোভা পাচ্ছে।

পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বাছির মোল্লা, এখন পর্যন্ত চারজন ছাড়া কাউকে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাচ্ছে না। এ জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ কম। তবে সম্মেলনের সময় কী ঘটবে, সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, ‘প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে আমরা প্রস্তুত। উপজেলা পর্যায়ে ৪৯৭ জনকে ভোটার করা হয়েছে। আর পৌর কমিটির জন্য ভোটার ৮৫২। তবে এই কথা সত্য পদ পেতে নতুন করে এখন পর্যন্ত কেউ আগ্রহ দেখাননি।’

দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের মাধ্যমে ভৈরব উপজেলা ও পৌর বিএনপির সবশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট। ওই সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন আগের কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদক করা হয় উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আরিফুল ইসলামকে। পৌর বিএনপির সভাপতি করা হয় দলটির কর্মী মো. শাহিনকে। তিনি ভৈরব পৌরসভার সাবেক মেয়র। সাধারণ সম্পাদক হন পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান। দুই বছরের কমিটি পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁরা নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন।

ওই সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এতে দুই নেতার মধ্যে কয়েক বছর বিভাজনের নেতৃত্ব ছিল। তখন দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তবে বর্তমানে দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব অনেকটা কমে এসেছে বলে কর্মী-সমর্থকেরা জানিয়েছেন। দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলা আছে। এই অবস্থায় দলে গতি ফেরাতে জেলা বিএনপি উভয় কমিটি বিলুপ্ত করে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উভয় আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব করা হয়।

তবে আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নিয়ে দলের একটি বড় অংশের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ নেই। কারণ, আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় জেল খেটেছেন। এখনো প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এ কারণে দলে তাঁদের অবস্থান নিয়ে অন্য নেতা-কর্মীদের আস্থা আছে।

পৌর বিএনপির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে আমি আবার পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী।’ এই পদে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কাউকে দেখছি না।’

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভোটের প্রয়োজন হবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।