ভোগাই নদের বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসী
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভোগাই নদের ভেঙে যাওয়া তিন কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে ভাঙনের দুই মাস পেরিয়ে গেছে। আবার পাহাড়ি ঢল এলে ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে সদ্য রোপণ করা আমনের ফসল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষক।
উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জুন উপজেলায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নয়াবিল ইউনিয়নের চারআলী, হাতিপাগার এলাকায় তিনটি অংশ, নয়াবিল এলাকায় দুটি অংশ ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকায় ২ হাজার ৫০০ মিটার ভোগাই নদের বাঁধের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া নয়াবিল এলাকায় তিনটি অংশে ৫০০ মিটার এবং পৌরসভার নিচপাড়া, উত্তরগড়কান্দা, গোবিন্দনগর ও খালভাঙ্গা এলাকায় আরও ৫০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এই ভাঙন অংশ দিয়ে সে সময় পানি প্রবেশ করে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ২৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ২০০ বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢলের পানিতে ১ হাজার ১৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে যায়। ২০০ হেক্টর আমনের বীজতলা ও ২৫০ হেক্টর আউশের ফসল পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে এলাকাবাসীর প্রকৃত উপকার হবে।
হাতিপাগার গ্রামের কৃষক রইস উদ্দিন বলেন, ‘হাতিরপাগার এলাকায় প্রায় ৫০০ মিটার নদের বাঁধের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় নদে ঢল নামলে বাঁধ ভেঙে কৃষকের আমনের ফসলের ক্ষতি করবে। আমরা চাই দ্রুত বাঁধ সংস্কার করা হোক।’ নয়াবিল এলাকার কৃষক হুরমুজ আলী বলেন, ‘নদীর ভাঙন অংশ মেরামত করা হয় নাই। ঘন ঘন বৃষ্টি অইতাছে, আবার নদীতে ঢল আইলে এলাকাবাসীর আর কোনো উপায় থাকত না। ভাঙন দিয়া পানি আইয়া আবারও মানুষের কষ্ট বাড়াইব। আমরা বান্দের দ্রুত মেরামতের দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে নয়াবলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউনুস আলী দেওয়ান বলেন, ইতিমধ্যে পরিষদের মাধ্যমে বাইন্নাপাড়ায় ভাঙন অংশ মেরামত করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহযোগিতা প্রয়োজন। পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ইতিমধ্যে নিচপাড়া এলাকায় ভাঙন অংশে বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু বালুমাটির অভাবে উত্তরগড়কান্দা এলাকায় ভাঙন অংশ এখনো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে এলাকাবাসীর প্রকৃত উপকার হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ভোগাই নদের ভাঙন অংশ চিহ্নিত করে ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের ভাঙন অংশ সংস্কার করতে বলা হয়েছে।
শেরপুর পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভোগাই নদের ভাঙন অংশ তাঁরা পরিদর্শন করেছেন। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প তৈরি করতে কারিগরি কমিটির গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।