ভোগান্তি নেই, ঈদযাত্রায় বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে পদ্মা সেতু

কোনো যানজট নেই পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক, টোলপ্লাজা ও এক্সপ্রেসওয়েতে। আজ দুপুরে জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজার সামনে
ছবি: প্রথম আলো

দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পঞ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রায় ভোগান্তির অবসান ঘটিয়েছে পদ্মা সেতু। ঈদে ঘরমুখী মানুষদের অনেকের প্রথমবার পদ্মা সেতু দর্শনও হচ্ছে এবার পথে। তাঁদের ঈদে এবার বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে স্বপ্নের এ সেতু।

পদ্মা সেতু চালুর পর প্রথম ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামে আসছেন মানুষ। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রীদের ঢল নামতে শুরু করে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু পেরিয়ে মানুষ নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাচ্ছেন। গত দুই দিনে প্রচুর মানুষ সেতু পারাপার হয়েছেন। ৬০ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে৷ যার ৮০ শতাংশ ছিল যাত্রীবাহী পরিবহন।

পিরোজপুরের নাজিরপুরের বাসিন্দা সোহাগ শেখ এক্সকাভেটরের (ভেকু মেশিন) চালক। কুমিল্লায় বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন। গ্রামে মা ও ছোট ভাই-বোন থাকেন। এত দিন চাঁদপুর থেকে লঞ্চযোগে গ্রামে যাতায়াত করেছেন। এবার পদ্মা সেতু দেখবেন বলে তিনি বাসে চড়ে গ্রামে ফিরেছেন।

সোহাগ শেখ বলেন, ‘তিন মাস অন্তর মাকে দেখতে গ্রামে যাই। ঝুঁকি নিয়ে রাতের লঞ্চে যাতায়াত করি। এখন পদ্মা সেতু হয়েছে, আমাদের আর নৌপথের ঝুঁকি নিতে হবে না। আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হচ্ছি, অনেক আনন্দ আমাদের। পদ্মা সেতুর কারণে ঈদের আনন্দটাও হবে বেশি।’

তিন মাস অন্তর মাকে দেখতে গ্রামে যাই। ঝুঁকি নিয়ে রাতের লঞ্চে যাতায়াত করি। এখন পদ্মা সেতু হয়েছে, আমাদের আর নৌপথের ঝুঁকি নিতে হবে না। পদ্মা সেতুর কারণে ঈদের আনন্দটাও হবে বেশি।
সোহাগ শেখ, পিরোজপুরের নাজিরপুরের বাসিন্দা

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বাসিন্দা সিদ্দিকুল আলম ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি বিয়ে করেছেন। শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুরের কালকিনিতে। স্ত্রীর পরিবার ঢাকায় থাকে বলে এখনো কালকিনিতে যাওয়া হয়নি। শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের সঙ্গে আজ শনিবার তিনি পদ্মা সেতু পেরিয়ে কালকিনি এসেছেন।

সিদ্দিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কখনো পদ্মা নদী পার হইনি। এ নদী নিয়ে তিক্ত কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। আজ সেতুতে উঠে পদ্মা পাড়ি দিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা পেলাম। এত দিন সংবাদমাধ্যমে সেতু সম্পর্কে জেনেছি। আজ সেতু দেখে বিশ্বাসই হচ্ছে না আমরা নিজেদের চেষ্টায় এত বড় সেতু বানাতে পেরেছি। অনেক খুশি খুশি লাগছে।’

সিদ্দুকুলের স্ত্রী তাহমিনা আলম বলেন, ‘শিশু বয়স থেকে ঢাকা যাতায়াত করার সময় পদ্মার ভয়াল রূপ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে স্বজনও হারাতে হয়েছে। কিন্তু আজ দুর্গম পদ্মার বুকে গর্বের সেতু পাড়ি দিয়ে আনন্দ লাগছে। ঈদের পরের দিন এখানে ঘুরতে আসব। তখন পদ্মা সেতুর বিভিন্ন অবকাঠামো ঘুরে দেখব। এবার পদ্মা সেতুর কারণে ঈদে আনন্দ বেড়েছে।’

ঢাকায় একটি বিমা কোম্পানিতে কাজ করেন অহিদুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পাঁচ বছর গ্রামে যাননি। শুধু পদ্মা সেতু দিয়ে পার হবেন, এ কারণে এ বছর ঈদে গ্রামে এসেছেন। অহিদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা-মা নেই। গ্রামে এলে মন খারপ হয়ে যায়। তাই ঈদে গ্রামে আসি না। এ বছর এসেছি শুধু পদ্মা সেতু দেখার জন্য। পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের ঈদে বাড়তি আনন্দ দেবে।’