ভোটের আগে ‘নৌকা’র লড়াই

স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী চান আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। গত দুবারের মতো এবার আর তাঁরা মেয়র পদটি খোয়াতে চান না।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুটি নির্বাচনেই দলীয় কোন্দলের কারণে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেননি। এবারও বিবদমান পক্ষগুলো সক্রিয় রয়েছে। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন পেতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লায় আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন আফজল খান। আরেক পক্ষে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন। গত বছর আফজল খান মারা যান। এখন তাঁর মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই দুই ধারার বাইরে তিনটি উপদল রয়েছে। এই উপদলের দুটি এসেছে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের বলয় থেকে, একটি আফজল খান বলয়ের। বাহাউদ্দিন বলয় থেকে এসেছেন ‘শিকদার’ পরিবার ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি (সহসভাপতি) নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। অপর দিকে আফজল খান বলয় থেকে এসেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান ওরফে মিঠু।

সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন এবার মেয়র পদে নিজের পছন্দের প্রার্থী আনতে ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতকে মেয়র পদে চান। মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে আরফানুলকে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করেন।

অপর দিকে দলীয় মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিনে গত বুধবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা মেয়র পদের জন্য আবেদন করেন। আলোচনায় রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমও।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্রমতে, শুক্রবার বিকেলে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, বিবদমান পক্ষগুলো কয়েক দিন ধরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের বাসা ও অফিসে গিয়ে দেখা করছেন।

আরফানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পেতে ঢাকায় আছি। সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন আমার সঙ্গে আছেন।’

আঞ্জুম সুলতানা বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছি। নির্বাচন করতে চাই।’

আর নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমের ভাষ্য, ‘আশা করি নেত্রী আমাকে এবার মূল্যায়ন করবেন।’

৫ থেকে ১১ মে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দলীয় আবেদন ফরম বিক্রি শুরু হয়। এতে ১৪ জন আবেদন ফরম জমা দেন। তাঁরা হলেন আঞ্জুম সুলতানা, আরফানুল হক, নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ওমর ফারুক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন, শ্যামল চন্দ্র ভট্টাচার্য, মাহবুবুর রহমান, শফিউর রহমান, কাজী ফারুক আহমেদ ও মো. শাহজাহান।

চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। ১৯ মে মনোনয়নপত্র বাছাই। ২৬ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার। ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ এবং ১৫ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।