ভোলার দুই ইউনিয়নে সংঘর্ষ, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৩৫

ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ লীগ ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে
প্রথম আলো

ভোলা সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর একটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে, অপরটি আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সংঘটিত হয়েছে। দুই সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সামনে রেখে ওই ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন ও দলটির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাত ৯টার দিকে ইউনিয়নের রতনপুর ও শান্তিরহাট বাজারে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ৪টি নির্বাচনী কার্যালয় ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত ১২ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।

হাসপাতালে ভর্তি আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মো. ফারুক, মো. হাসান, মো. শাহাবুদ্দিন, মো. নাহিদ, মো. জামাল, মো. বেলায়েত হোসেন, মো. জামাল, মো. রাকিব, খায়রুল ইসলাম তুহিন, মো. জাবেদ, মো. আজাদের নাম জানা গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শিবপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে নৌকার প্রার্থী জসিম উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের (চশমা প্রতীক) কয়েকজন সমর্থকদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জনকে। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত ১২ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও র‍্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও উত্তেজিত সমর্থকেরা দুই ভাগে অবস্থান নেওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোলার সদর উপজেলার ইলিশায় ছয়টি মোটরসাইকেলযোগে ১০-১২ জন গিয়ে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর উঠান বৈঠকে হামলা চালান। পরে গ্রামবাসী তাঁদের ধাওয়া করেন।

নৌকার প্রার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর একটি উঠান বৈঠক চলাকালে খবর পান, তাঁর ৩টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় কুপিয়ে ও পিটিয়ে তাঁর ১০-১২ জন কর্মীকে আহত করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্বাচন বানচাল করার জন্য এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, শান্তিরহাট বাজারের কাছে একটি জায়গায় তাঁর সমর্থকদের নির্বাচন অফিস থেকে দেওয়া ইভিএমে ভোট দেওয়ার কিছু ভিডিও চিত্র দেখানো হচ্ছিল। এ সময় নৌকার সমর্থকেরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং হামলা চালান। হামলায় তাঁর ১৪-১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। পরে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে মারধর করেছেন নৌকার সমর্থকেরা। নৌকার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের কথা নাকচ করেন তিনি।
সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সুজা বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয় পক্ষ রাস্তায় অবস্থান করে স্লোগান দিচ্ছিল। আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এরপরও বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইলিশায় উঠান বৈঠকে হামলার অভিযোগ

ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর (নৌকা প্রতীক) বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর (ঘোড়া প্রতীক) উঠান বৈঠকে বোমা হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতরা ভোলা সদর হাসপাতালে ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরানন্দ পার্ট-৩ গ্রামের বহরুদ্দিনের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ভোলা সদর থানার আওতাধীন ইলিশা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলায় বড় ধরনের হতাহত হয়নি। পরিস্থিতি শান্ত আছে। ছয়টি মোটরসাইকেলযোগে ১০-১২ জন গিয়ে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর উঠান বৈঠকে হামলা চালান। পরে গ্রামবাসী তাঁদের ধাওয়া করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইলিশা ইউনিয়নের চরানন্দ পার্ট-৩ গ্রামের বহরুদ্দিনের বাড়িতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সিরাজ উঠান বৈঠক করছিলেন। এ সময় নৌকার প্রার্থী মো. সরোয়ারদির লোকজন ৬টি মোটরসাইকেলযোগে এসে অতর্কিত কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করেন। এতে উঠান বৈঠকে আসা গ্রামবাসী যে যার মতো দৌড়ে জীবন বাঁচায়। হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে ঘোড়ার সমর্থকদের এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন। চেয়ার ভাঙচুর করেন। এতে জালালউদ্দিন, রাবেয়া বেগম, শামসুন্নাহার, কালুমিয়াসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই গ্রামের কয়েক শ নারী ঝাড়ু নিয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করেন। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সরোয়ারদি হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় তিনি উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ছিলেন।

পঞ্চম ধাপে ৫ জানুয়ারি এ দুই ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।