ভোলায় ভূমিদস্যুদের অত্যাচার থেকে রক্ষার দাবিতে চরবাসীর মানববন্ধন
ভূমিদস্যুদের অত্যাচার থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর চটকিমারা এলাকার বাসিন্দারা। আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের সাখাওয়াত হোসেন রুবেল কাজীকে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে তাঁর ও তাঁর বাহিনীর বিচার দাবি করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে চর চটকিমারা এলাকার দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন থেকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, রুবেল কাজীর নেতৃত্বে প্রায়ই চর চটকিমারা মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও গরু-ছাগল লুটপাটের ঘটনা ঘটে আসছে। কিছু হলেই তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শ্রীপুর চর থেকে ভোলার চটকিমারা চরে এসে মানুষের ওপর অত্যাচার, জমির ফসলসহ গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যায়। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে মারধরসহ মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। তাঁরা এসব অত্যাচার থেকে মুক্তি চান।
মানববন্ধন শেষে ভোলার জেলা প্রশাসকের কাছে শতাধিক ভুক্তভোগীর গণস্বাক্ষরসংবলিত একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চর চটকিমারা এলাকাটি ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এর পশ্চিমে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন। ২০০৩ সালের দিকে সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে সাখাওয়াত হোসেন রুবেল কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল প্রায়ই চটকিমারা চরে আগুন দিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে মালামাল লুট করে নিয়ে যেত। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন মামলা দিলে ভোলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বরিশালের জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত চটকিমারা চরে মানুষ নিশ্চিন্তে শান্তিপূর্ণভাবে চরে বসবাস করে আসছে।
২০১৯ সালে সরকার নতুন করে চরের সীমানা নির্ধারণ করলে আবারও শুরু হয় চরের মানুষের ওপর রুবেল বাহিনীর অত্যাচার ও নিপীড়ন। রুবেল কাজীসহ তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে মানুষের ঘরে আগুন দিয়ে মালামাল ও গরু-মহিষ লুট করে নিয়ে যাওয়া শুরু করে। এমনকি জমির ফসলও কেটে নিয়ে যায় তারা।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে দেশি অস্ত্র নিয়ে চটকিমারা চরে হামলা চালিয়ে প্রায় ২১টি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা ঘরের মালামাল, টাকা, ১০৩টি গরু ও ৩৩টি ছাগল লুট করে নিয়ে যায়। চরের বাকি ঘরগুলোও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলায় অভিযুক্তরা জেলহাজতে থাকলেও তাঁদের বাহিনীর বাকি সদস্যদের আতঙ্কে এখনো নির্ঘুম রাত কাটে চরবাসীর।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সর্বশেষ আগুন ও লুটপাটের ঘটনার সময় চরে প্রশাসনের লোকজন গেলে স্থানীয় চরবাসী তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি পুলিশ ক্যাম্প দাবি করেন। কিন্তু সেই দাবির এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি চরে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি চরবাসীর।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন। বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।