অস্ত্রোপচারের জন্য ৭ জুন বেলা একটায় অন্তঃসত্ত্বা নারী জুলিয়া আক্তারকে (২০) চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তাঁর স্বামী। এসে জানতে পারেন, সেখানে অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক নেই। হতাশ হয়ে ফিরে যান।
জুলিয়ার স্বামী উজ্জ্বল প্রধান বলেন, পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীর অস্ত্রোপচার করান। এতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সঙ্গে ছিল নানা ঝামেলা। জুলিয়া আক্তার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর ছেংগারচর গ্রামের উজ্জ্বল প্রধানের স্ত্রী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেখানকার স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞ (সার্জন) ফৌজিয়া শারমিন বদলি হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে পদটি শূন্য। এ ছাড়া অবেদনবিদ পদে আবদুল মান্নান ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বদলি হওয়ার পর ওই পদটিও খালি। ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পাশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অবেদনবিদ এনে সেখানে অস্ত্রোপচারের কাজ চালিয়েছেন প্রসূতিরোগের ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুসরাত জাহান। এরপর বাইরে থেকে অবেদনবিদ না আসায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারীর অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন কর্মচারী বলেন, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রতিদিন তাঁদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে তিন-চারজন করে গর্ভবতী আসেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক ও অবেদনবিদ না থাকায় চিকিৎসা ছাড়াই তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। পরে আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন তাঁরা।
উপজেলার দশানি গ্রামের প্রসূতি নাজমা আক্তার ও হাসিমপুর গ্রামের মনিরা আক্তার জানান, গত সোমবার (৭ জুন) সিজার করানোর জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান তাঁরা। গিয়ে জানেন অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক নেই। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যান। পরে রাতে স্থানীয় একটা বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করান তাঁরা। এতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা করে। ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করতে হয়েছে তাঁদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞ (সার্জন) ও অবেদনবিদ পদে লোক না থাকায় হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। এসব পদে লোক নিয়োগের জন্য সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে।