মধ্যবিত্তের টানাটানির সংসারে আরও টান

বাজার করতে গিয়ে বাজেটের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ক্রেতারা হতাশ। মূল্যবৃদ্ধির চাপে অসহায় সাধারণ মানুষ।

নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শুক্রবার রাতে বরিশাল নগরের চৌমাথা বাজারেছবি: প্রথম আলো

শুধু সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্যতেল নয়; অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে বরিশালের বাজারগুলোতে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজার করতে গিয়ে বাজেটের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা। অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির চাপে অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

শুক্রবার বরিশালের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এমন হতাশার কথা জানান। ক্রেতারা বলছেন, বাসা থেকে চাহিদা অনুযায়ী ফর্দ করে বাজারে আসেন। কিন্তু নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তালিকার অর্ধেক পণ্যই কিনতে পারছেন না।

নগরের নতুন বাজার এলাকায় কথা হয় তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী সুজন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, সওদার যে ফর্দ আর টাকা নিয়ে বাজারে এসেছেন, তাতে অর্ধেক পণ্যও কিনতে পারেননি। সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে এখন আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যেভাবে পারছেন, দাম বাড়িয়ে বসে আছেন।

নগরের বটতলা এলাকার একজন মুদি ব্যবসায়ী নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘সব জিনিসপত্রের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে আমাদেরও ক্রেতাদের মুখের দিকে তাকাতে খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। আমরা যেভাবে পাইকারি মোকামে কিনি, সেভাবে বিক্রি করতে হয়।’

মধ্যবিত্তদের মতো নিম্নবিত্তরাও আছেন মহাসংকটে। তাঁদের টানাটানির সংসারে এখন আরও টান পড়েছে। এখন অর্থ সাশ্রয় করতে গিয়ে খাবারে টান পড়েছে। নগরের কাকলী মোড় এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এহন আর আয় দিয়া কুলাইতে পারি না। বাজারে গ্যালে দাম হুইন্না কইলজাডা মোচড় মারে। প্যাডে খিদা লইয়্যা এহন রিকশা চালাই। আগে বাইরে চা-নাশতা খাইতাম। এহন খাই না।’

বটতলা এলাকার ব্যবসায়ী মাহতাব হোসেন বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই সব পণ্যের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা পাইকারি মোকাম থেকে যেভাবে কিনি, সেইভাবে আমাদের বিক্রি করতে হয়।’

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৪০ থেকে ৪২ টাকার আটা এখন ৫০ টাকা, ৪৫ টাকার ময়দা এখন ৬৫ টাকা, ১০০ টাকার বড় রসুন এখন ১৫০ টাকা, ৩৫ থেকে ৪০ টাকার দেশি রসুন এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ৫৫ টাকার চিনি ৮০ টাকা, ৮০ থেকে ৮৫ টাকার মসুর ডাল এখন ১১০ টাকা, ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকার আধা কেজির গুঁড়া দুধ এখন ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা, ৪৫ থেকে ৫০ টাকার টুথপেস্ট ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সব ধরনের সাবানে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা, ডিটারজেন্টে বেড়েছে ২০ থেকে ২৬ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া চাল প্রকারভেদে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। পাশাপাশি মসলার দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক।’

ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় সব বাজারে। সব জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে সব ক্ষেত্রে। খাবার হোটেলগুলোতে সব খাবারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ।

নগরের বিভিন্ন খাবার হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের পাঁচ টাকা দামের পরোটা, রুটি, পুরি, শিঙাড়া ১০ টাকায় করে বিক্রি হচ্ছে।

হোটেলমালিকেরা বলছেন, বাজারে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁদেরও দাম বাড়াতে হয়েছে।

হেলাল মিয়া নামে নগরের আলেকান্দা এলাকার একজন ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগে সকালে যে পরিমাণ রুটি, সবজি, ডিম বিক্রি করতাম, এখন তার অর্ধেকও বিক্রি হয় না।’

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাহ্ শোয়াইব মিয়া বলেন, ‘আমরা তদারকিমূলক অভিযান চালাই। দোকানগুলোতে মূল্যতালিকা আছে কি না, তা তদারক করি। কেউ মূল্যবৃদ্ধি করলে তাঁদের জরিমানা করা হয়।