মনিরের হাতে বদলে গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি

একসময় ধান ছাড়া অন্য ফসলের চাষ হতো না বরেন্দ্র অঞ্চলে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে মনির সেখানে বিভিন্ন জাতের ফসল ফলিয়েছেন।

মনিরুজ্জামান মনির

একসময় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বৃষ্টিনির্ভর ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসলের চাষ হতো না। বর্তমানে অনাবৃষ্টি ও মাটির পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ধান থেকে সরে আসছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার আর দীর্ঘদিনের চেষ্টায় বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে বিভিন্ন জাতের ফসল ফলিয়েছেন মনিরুজ্জামান মনির (৪০) নামের এক কৃষক। তাঁর চাষ করা ফসলগুলোর মধ্যে আছে স্ট্রবেরি, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ, রক মেলন, হানি ডিউ, চিয়া ও হলুদ স্কোয়াশ।

একটি অঞ্চলের কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পদকও মিলেছে মনিরুজ্জামনের। ২০১৬ সালে পান বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক। নতুন ফসল চাষের নেশা এই যুবককে চাকরি ছেড়ে কৃষির মাঠে নিয়ে এসেছে।

মনিরুজ্জামানের বাড়ি রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায়। আর ফসলের মাঠ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরে। এ এলাকায় তিনি প্রথম স্ট্রবেরি, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ, হলুদ স্কোয়াশসহ নানা জাতের ফসলের চাষ শুরু করেন। মাঠপর্যায়ে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বীজ আলু উৎপাদন, মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষ, থাই পেয়ারা চাষ, মালচিং পদ্ধতিতে শসা, বিলুপ্তপ্রায় ধান কৃষ্ণভোগ চাষসহ অন্যান্য সবজি চাষ করছেন।

বর্তমানে গোদাগাড়ীর চর নওশারায় ৯ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা, চৈতন্যপুরে ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল ও দেড় বিঘা গ্রীষ্মকালীন তরমুজ রয়েছে। এক বিঘা জমিতে স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ উদ্ভাবিত নূর ধান ও আরও ছয় বিঘা জমিতে টমেটোর জন্য প্রস্তুত করছেন।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস সামনে রেখে কথা হয় মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। তাতে সফল কৃষক হওয়ার আগে তাঁর প্রচেষ্টার গল্পও জানা যায়। মনিরুজ্জামান ২০০১ সালে রাজশাহী কলেজে স্নাতক কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু সংসারের অনটনের কারণে পড়াশোনা চালাতে পারেননি। পরে রাজশাহীর একটি হিমাগারে চাকরি নেন। ২০০৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেন টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বীজ আলু উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তা দেখে উৎসাহিত হন মনিরুজ্জামান। ৮০ হাজার টাকা ধার নিয়ে হিমাগারের সামনেই ১৮ কাঠা জমিতে নতুন প্রযুক্তির বীজ আলু চাষ শুরু করেন। বীজ আলু বিক্রি হয় ৮০০ টাকা কেজি দরে। মুনাফা হয় ছয় লাখ টাকা। এরপরই চাকরি ছেড়ে দেন মনির।

টানা চার বছর বীজ আলু উৎপাদন করেন। কিন্তু একপর্যায়ে আলুর বাজারদর কমে যায়। এরপর দেশের আবহাওয়ার উপযোগী স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। এরপর মনিরুজ্জামানের রক মেলন, হানি ডিউ, চিয়া ও হলুদ স্কোয়াশের চাষ দেখে অন্যরাও এসবের চাষ শুরু করেন। মনিরুজ্জামান বলেন, এতগুলো ফসল চাষ করেছেন, এর কোনোটিই নিজের জমিতে নয়। সব জমি বর্গা নিয়ে। পুরস্কারও পেয়েছেন বর্গাচাষি হিসেবেই।