মনে ঈদের আনন্দ নেই সাইমের

মো. আশেক মাহমুদ

‘আগে প্রতিবছর ২০ রমজানের পর ঈদের আমেজ শুরু হতো। বাবা ঈদের কেনাকাটার জন্য সবাইকে টাকা ভাগ করে দিতেন। বারবার ফোন করতেন। জানতে চাইতেন, কখন মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করব। প্রিয় সেই বাবাকে মহামারি করোনা কেড়ে নিয়েছে। এরপর কেটে গেছে দুই বছর। বাবাকে হারিয়ে এখন আর ঈদে মনে আনন্দ কাজ করে না।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পুলিশ সদস্য মো. আশেক মাহমুদের বড় ছেলে সাইম মাহমুদ বাবার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। দুটি সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাতেন। এখন সন্তানদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। ওরা কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেছে।
মমতাজ আক্তার, আশেক মাহমুদের স্ত্রী

মো. আশেক মাহমুদ জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ইন্দ্রবাড়ি গ্রামের মৃত আয়েজ উদ্দীনের ছেলে। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ২৭ এপ্রিল দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিন নমুনা পরীক্ষায় তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। তাঁকে সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে আইসোলেশনে রাখা হয়। এর দুই দিন পর ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। দ্রুত তাঁকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের (সিপিএইচ) আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে মারা যান তিনি।

আশেক মাহমুদের স্ত্রী মমতাজ আক্তার সুমি গৃহিণী। তাঁদের বড় ছেলে সাইম মাহমুদ ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ে।

সাইম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর খবরটা এখনো কানে বাজে। প্রথম ফোনটা আমার কাছেই এসেছিল। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে বাবাকে হারাতে হয়েছে যে তাঁর শরীরটা ছুঁয়েও দেখতে পারিনি। এই আক্ষেপ আমাকে পোড়ায়। খাতা-কলমের হিসাবে দুই বছর বাবা নেই। কিন্তু আমাদের কাছে সময়টা দুই যুগের মতো মনে হয়।’

স্বামী আশেক মাহমুদকে হারিয়ে জীবনের সব আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে স্ত্রী মমতাজ আক্তারের। বিষাদমাখা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি, এত অল্প সময়ের মধ্যে স্বামীকে হারাতে হবে। এখন দুই ছেলেকে নিয়ে সাগরে ভাসছি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। দুটি সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাতেন। এখন সন্তানদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। ওরা কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেছে।’

প্রতি ঈদের আগে পুলিশ বিভাগ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন জানিয়ে মমতাজ আক্তার বলেন, ‘তিনি চলে যাওয়ার পরও পুলিশ বিভাগ সহযোগিতা করেছে। সেই টাকায় বাড়ি নির্মাণ করেছি। এখন প্রতি মাসে ৯ হাজার ৯০০ টাকা পাই। সেই টাকায় চলতে হয়। সহযোগিতায় পাওয়া টাকা আস্তে আস্তে খরচ করতে হচ্ছে। একটা সময় সেই টাকা ফুরিয়ে যাবে। তখন দুই সন্তানকে নিয়ে কী করব, সেই চিন্তা হয়।’