ঢাকার সাভারে আজ সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উল্টো লেনে এসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বহনকারী কার যানজট সৃষ্টি করছিল। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজনের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) ধামরাই উপজেলা শাখার এক নেতা।
তিনি বলছেন, গাড়িটির সামনের কাচ ভেঙে ফেলার অভিযোগ দিয়ে তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান কর্মীরা। সেখানে তাঁকে কিছু সময় আটকে রাখা হয়; ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা।
ঘটনার বেশ কিছু অংশ নিজের ফেসবুক পেজে লাইভ করেছেন ভুক্তভোগী নিসচা ধামরাই উপজেলা শাখার সহসভাপতি ইমরান হোসেন। ফেসবুক লাইভ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের নয়ারহাট ও ধামরাইয়ের ইসলামপুর এলাকার উভয় পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল আটটার দিকে বাসযোগে উত্তরায় অফিসে যাচ্ছিলেন ইমরান হোসেন। এ সময় সড়কে তীব্র যানজট থাকায় ধামরাইয়ের ইসলামপুরে মুন্নু সিরামিকসের সামনে নেমে যান তিনি।
বাস থেকে নেমে ইমরান মহাসড়কের ঢাকামুখী অংশে আরিচামুখী বেশ কিছু পরিবহন ঢুকে পড়ায় সেগুলো সরিয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা করেন। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় তিনি যানজট সরানোর চেষ্টা চালিয়ে সাভারের নয়ারহাট এলাকায় পৌঁছান। সেখানে দেখেন প্রতীক সিরামিকস লিমিটেডের কর্মীদের বহনকারী আরিচামুখী একটি কারের (ঢাকা মেট্রো-চ ৫৩-৩৪৬৮) কারণে ঢাকামুখী অংশে যানজটের সৃষ্টি হতে দেখেন। আরিচামুখী অংশে যানজট থাকায় গাড়িটি ঢাকামুখী লেন দিয়ে যাচ্ছিল।
গাড়িটিকে পেছনে সরে নির্দিষ্ট লেন দিয়ে চলতে বলেন। চালক বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় ইমরান উত্তেজিত হয়ে পুনরায় চালককে গাড়ি নির্দিষ্ট লেনে নিতে বলেন।
এ সময় ওই গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় ইমরানের। এ সময় গাড়িটির কারণে আটকে থাকা ঢাকামুখী ধামরাই গুলিস্তান ব্যানারের একটি বাস থেকে পাঁচ-ছয়জন যাত্রী নেমে ওই গাড়ির চালককে লেন থেকে উত্তেজিতভাবে সরে যেতে বলেন। একপর্যায়ে এক ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের গাড়িটির সামনের কাচে হাত দিয়ে আঘাত করলে তা ভেঙে যায়। পরে প্রাইভেট কারটি সরিয়ে রাস্তার পাশে রাখেন চালক। ইমরান তাঁর এক ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে করে পুনরায় ইসলামপুরের দিকে চলে আসেন। কয়েক মিনিট পর গাড়িটিও ইসলামপুর পৌঁছায়। ওখানে ইমরানকে পেয়ে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতীক সিরামিকসের কারখানায়।
ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট লেন ছেড়ে উল্টো লেনে গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করায় আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে ইসলামপুর থেকে আমাকে থানায় নেওয়ার কথা বলে ওই গাড়িতে তুলে তাঁরা কালামপুরের ডাউটিয়া এলাকায় প্রতীক সিরামিকস লিমিটেডের কার্যালয়ে নিয়ে যান। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ হাজার টাকাও নেওয়া হয় আমার কাছ থেকে। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে কালামপুরের প্রতীক সিরামিকসের ব্যবস্থাপক আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন স্টাফকে নিয়ে সড়কে নিয়ম মেনেই চালক গাড়িটি নিয়ে অফিসে আসছিলেন। তাঁরা নয়ারহাটে পৌঁছালে যানজটে গাড়িটি আটকে যায়। এ সময় এক যুবক তাঁদের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করে গাড়ির সামনের ও লুকিং গ্লাস ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁকে অফিসে আনা হলে সে ভুল স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। তাঁকে আটকে রাখা এবং জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।’
ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিসচার ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি এম নাহিদ মিয়া দুপুরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।