মাগুরায় সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় এক পক্ষের মামলা
মাগুরায় ইউপি নির্বাচনের দুই সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় এক পক্ষ মামলা করেছে। ওই ঘটনায় কবির মোল্লা (৫২), সবুর মোল্লা (৫০) নামের দুই ভাই ও তাঁদের চাচাতো ভাই রহমান মোল্লা (৫৬) এবং অপরপক্ষের ইমরান মোল্লা (২৫) নিহত হন। ঘটনার প্রায় ৭০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরে কবির ও সবুরের ছোট ভাই মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন।
মামলায় মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম ও তাঁর পাঁচ ভাইসহ ৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে হত্যাসহ অন্তত ১০টি ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। সংঘর্ষে নিহত ইমরান বর্তমান ইউপি সদস্য নজরুলের সমর্থক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুরুল আলম জানান, ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে নিহত ইমরানের পক্ষে আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় জগদল ইউনিয়নের সৈয়দ রূপাটি দমদমপাড়ার বাসিন্দা সবুর মোল্লা তাঁর দুই ভাইসহ কয়েকজনকে নিয়ে জগদল দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহিম মাস্টারের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে হাকিম নামের এক ব্যক্তির চায়ের দোকানের সামনে পৌঁছালে এজাহারে উল্লিখিত আসামিসহ আগে থেকে ওত পেতে থাকা অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জন তাঁদের ঘিরে ধরেন। এরপর মামলার ১ নম্বর আসামি ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁর পাঁচ ভাইসহ অন্যরা বাদীর বড় ভাইদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় রামদা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁরা বাদীর ভাইদের কোপাতে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই কবির মোল্লা ও সবুর মোল্লা দুই ভাই নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তাঁদের চাচাতো ভাই রহমান মোল্লা। হামলায় বাদীর আরও এক ভাই ও এক ভাতিজা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ওই দুজনকে ঢাকা ও ফরিদপুরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার প্রায় ৭০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরে নিহত কবির ও সবুরের ছোট ভাই মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ হাসান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঘটনার দিন সৈয়দ হাসানের বড় ভাই আবদুর রহিম মাস্টারের বাড়িতে যাচ্ছিলেন নিহত সবুর ও তাঁর ভাইয়েরা। দীর্ঘদিন ধরে ইউপি সদস্য নজরুল ও স্থানীয় মাতবর সবুর মোল্লার মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। ২০০৩ সালে প্রতিপক্ষের হামলায় সবুর মোল্লার বড় ভাই জরিফ মোল্লা নিহত হন। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন ইউপি সদস্য নজরুল ও তাঁর লোকজন। এবারের নির্বাচনে সবুর মোল্লা সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ হাসানকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এসব কারণেই হামলা ও সংঘর্ষ ঘটে।
সংঘর্ষের পর থেকেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লুটপাট ও হামলার আতঙ্কে শনিবার অনেককে ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। বিবদমান দুটি পক্ষের বেশির ভাগের বাড়ি গিয়ে কোনো পুরুষ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। নারীরা বাড়িতে থাকলেও তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।