মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে ব্যানার কেড়ে নেওয়ার পর মূল রাস্তা ছেড়ে প্রেসক্লাবের গলিতে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। আজ রোববার মাগুরা প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

‘নিজ টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। সেখানে বাড়ি বানাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়েছেন চেয়ারম্যান। সেই অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এ কারণে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানেও হামলা করে ব্যানার কেড়ে নিয়ে গেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।’

মাগুরায় হামলার বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে আয়োজন করা মানববন্ধনে আবার হামলার শিকার হয়ে এ অভিযোগ করেছেন ইয়াসিন খান (৩৪) নামের এক যুবক। তিনি শ্রীপুর উপজেলার মান্দারতলা গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলার ওয়াপদা বাজারে টাইলসের ব্যবসা করেন।

ভুক্তভোগী ইয়াসিন বলেন, প্রায় আট মাস আগে নাকোল ইউনিয়নের শাবলগাছা গ্রামের আলিয়ার রহমানের কাছ থেকে ৬ শতাংশ জমি কেনেন। বাড়ি করার জন্য গত শুক্রবার সেখানে বালু ফেলা শুরু করেন। এ সময় পাশের জমির মালিক শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়নুর রশিদ মুহিত বাধা দেন।

ইয়াসিন খানের ভাষ্য, ওই দিন সেখানে উপস্থিত হয়ে জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁর ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগের ওই নেতা। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখান। একই দিনে জমি বিক্রির অভিযোগে ভ্যানচালক আলিয়ার রহমানকে মারপিট করে হাত ভেঙে দেন ওই জনপ্রতিনিধি।

ইয়াসিন খান জানান, এই ঘটনার পর শুক্রবার শ্রীপুর থানায় হুমায়নুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান তিনি। তবে পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়টি এড়িয়ে অভিযোগ দায়ের করতে বলে। এমন পরিস্থিতিতে হামলার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে আজ রোববার বেলা ১টার দিকে মাগুরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রমেশ কুমার বৈদ্যসহ কয়েকজন হামলা চালিয়ে ব্যানার কেড়ে নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন সাংবাদিকেরা। এ সময় দৈনিক অধিকার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হেলাল হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় মাগুরা প্রেসক্লাবের গলির মধ্যে ব্যানার ছাড়াই মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। মানববন্ধন শেষে পুলিশ সুপারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন তাঁরা।

হামলা ও ব্যানার কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা রমেশ কুমার বৈদ্যের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতারা কোনো হামলা বা ব্যানার কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত নন। আমি যত দূর শুনেছি, মানববন্ধন করতে আসা ব্যক্তিদের একটি পক্ষ বাধা দিচ্ছিল। এটা নিয়ে সেখানে জটলা তৈরি হয়। সেখানে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা এগিয়ে গিয়েছিলেন সমাধানের জন্য। এখন উল্টো তাঁদের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়নুর রশিদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের ওপর কারা হামলা করেছেন, এটা আমার জানা নেই। তাঁরা যেখানে বালু ফেলছিলেন সেখানে আমারও জমি আছে। সেদিন যাওয়ার সময় তাঁদের বলেছিলাম, “বালু ফেলার আগে জমিটা মেপে নিস।” এ ছাড়া আর কিছুই আমার জানা নেই।’

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের সত্যতা পায়নি। হামলা বা এ ধরনের ঘটনায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারি সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়, তাঁদের সেটাও ছিল না। তাৎক্ষণিকভাবে এসব কারণে মামলা হয়নি। আজ তাঁদের স্মারকলিপি পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’