মাছ কাটায় আয় ভালো ছিল, দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সে পেশায়ও দুর্দিন
বাজারে মাছ কেটে সংসার চালান আবুল কালাম। আয়ও ছিল বেশ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলচ্ছিল সংসার। তবে নিত্যপণ্যের মতো পাল্লা দিয়ে মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে আবুল কালামের জীবিকায়। তাঁকে দুই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা মাছ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন, এতে কমেছে তাঁর মাছ কাটার পরিমাণ, যার কারণে আয় আগের চেয়ে কমেছে।
অন্যদিকে, আর সবার মতো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির খড়্গ আবুল কালামের ওপরও পড়েছে। তাঁকেও বাজার থেকে বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হচ্ছে। এতে সংসার চালানোর পুরোনো সুদিনের কথা ভুলে এখন রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আবুল কালামকে।
আবুল কালাম বরিশালের সবচেয়ে বড় মাছবাজার চৌমাথা বাজারে মাছ কাটেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। তিন সন্তান নিয়ে তিনি ও তাঁর স্ত্রী থাকেন নগরের উপকণ্ঠ কাশীপুরে। চৌমাথা বাজারে আবুল কালামের মতো আরও ১১ জন নারী-পুরুষ মাছ কাটার কাজ করেন। মাছের বাজারের এমন অবস্থায় তাঁদের সবার রোজগারেই টান পড়েছে।
চৌমাথা বাজারে মাছকাটা পেশায় যুক্ত এসব নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবকিছুর মতো মাছের দামও এখন অনেক বেশি। তাই মাছের দোকানে ক্রেতাদের আগের মতো ভিড় নেই। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন হিসাব করে চলেন। ইচ্ছা থাকলেও অনেকে বড় মাছ কেনেন না। সে জন্য তাঁদের আয় কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে হাজার-বারো শ টাহা আয় কইর্যা বাড়ি যাইতাম। এহন পাঁচ-ছয় শর বেশি অয় না। কিন্তু খরচা তো কমে নাই, বাড়ছে। ক্যামনে চলি কন?’
পাশেই একটি কাতলা মাছ কাটছিলেন আমির সিকদার। তিনি এ বাজারের সবচেয়ে বড় মাছকাটার দোকানটির মালিক। তাঁর দোকানে দুজন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের আয় অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে হয়। এতে কোনো দিন ৩০০ টাকা, আবার আয় বেশি হলে ৫০০ টাকা করেও পান প্রত্যেকে। আর তাঁর কাছে থাকত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। কিন্তু এখন আয় কমে যাওয়ায় মালিক আমির সিকদারেরও টানাটানি শুরু হয়েছে। দুজন শ্রমিকও আছেন বেজায় সংকটে।
আমির সিকদার বলেন, ‘এহন মোট দেড় হাজার আয় করনেই কষ্ট অয়। আগে বাজারে বড় বড় মাছ কাটতাম। আয়ও বেশি অইতো। এহন ছোট মাছ কাটতে সময়ও বেশি যায়, আবার টাহাও কম পাই। সংসার চালানে যে কী কষ্ট, বুঝাইতে পারমু না।’
পাশেই ছোট মাছ কাটছিলেন কোহিনূর বেগম। পোয়া মাছ কাটায় ব্যস্ত কোহিনূর তীব্র গরমে ঘামছিলেন। তবু তাঁর মনোযোগ মাছ আর বঁটির দিকে। একটু অমনোযোগী হলেই কেটে যেতে পারে হাত। কথা তুলেতেই মাছ কাটা থামালেন। বললেন, ‘আগে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করতাম। এহন কোনো দিন ৩০০ আবার কোনো দিন তাও অয় না।’
বরিশাল নগরের বটতলা, বাংলাবাজার, পোর্টরোড, নথুল্লাবাদ, সাগরদি, নতুনবাজার, রূপাতলী—এসব বাজারে এ রকম অন্তত ২০০ মানুষ মাছ কাটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তাঁরা এই পেশায় এত দিন মোটামুটি ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতেন। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের আয়ে যেমন টান পড়েছে, তেমনি সংসারে ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে অনেকের মতো এ পেশাজীবীদের জীবনেও নেমে এসেছে দুর্দিন।