মাছ খেতে এসে ফাঁদে পড়েছে মেছো বাঘ
ফারুক হোসেনের বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। কয়েক দিন ধরে রাতে পুকুরে অচেনা শব্দ শোনা যেত। রাত বাড়ার সঙ্গে শব্দও বেশি হতো। বিষয়টি খেয়াল করার পর রাতে শব্দ শোনার পর টর্চলাইট দিয়ে সন্ধান চালানো হয়। এ সময় কয়েকটি মেছো বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। এরপর পাশের গ্রাম থেকে একটি লোহার খাঁচা সংগ্রহ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খাঁচায় মুরগি দিয়ে পুকুরের পাশে রেখে দেওয়া হয়। রাতে একটি মেছো বাঘ মুরগি খেতে খাঁচায় প্রবেশ করে আটকে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের কাঁঠালতলা এলাকায়। আটক মেছো বাঘ দেখতে বুধবার সারা দিনই ভিড় করেছে উৎসুক গ্রামবাসী। দিনভর খাঁচায় আটকে থেকে অনেক নিস্তেজ হয়ে পড়েছে মেছো বাঘটি।
ফারুক হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে রাত ১০-১১টা বাজার পর পুকুরে খুব শব্দ শোনা যেত। এরপর দেখা যায় তিন-চারটি মেছো বাঘ পুকুরে এসে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে। কয়েক দিন ধরেই এমনটা হচ্ছিল। বাড়ির বাচ্চাদের ক্ষতি করতে পারে ভেবে ফাঁদ পাতা হয়। পরে রাতে ফাঁদে একটি মেছো বাঘ আটকা পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি মেছো বাঘ ছিল, কিন্তু একটি ধরা পড়েছে। খবরটি শোনার পর সারা দিন মানুষ মেছো বাঘটি দেখতে ভিড় করছে। বছর দুই আগে পাশের ভবানীপুর গ্রামে একটি মেছো বাঘ ধরা পড়েছিল।
জহিরুল ইসলাম আরও বলেন, মেছো বাঘটি খুব মনমরা হয়ে আছে। তাকে একটি কোয়েল পাখির বাচ্চা খেতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেটি খায়নি। এমনকি রাতের মুরগির অবশিষ্ট অংশও খায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাঘ আটক হওয়ার বিষয়টি দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রশাসন থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
ঢাকার বন্য প্রাণী অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন ল্যাব টেকনিশিয়ান কনক রায় বলেন, প্রাচীনকাল থেকে মেছো বাঘ এই দেশে বসবাস করছে। জলাভূমি, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে এসব প্রাণী খাদ্যসংকট ও আবাসনসংকটে পড়েছে। এরা নিশাচর প্রাণী। মেছো বাঘ বলা হলেও এরা মেছো বিড়াল। এদের আটক করা বেআইনি। যারা আটক করেছে, তাদেরই এটা ছেড়ে দিতে হবে। তবে দিনের বেলায় ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তাহলে কুকুর তাকে বিরক্ত করতে পারে। এ কারণে আটক করার স্থান থেকে সন্ধ্যার পর ছেড়ে দিলে ভালো হয়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি প্রাণীর অবদান রয়েছে।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যক্ষ মো. নূরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মেছো বাঘ মাংসাশী প্রাণী। এরা সাধারণত জলাশয়ের পাশে ছোট ঝোপঝাড়ে থাকে। মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, কচ্ছপ খেয়ে থাকে। আবার ইঁদুর, পাখি, বুনো খরগোশ, নির্বিষ সাপ, শিয়াল, কুকুর, হাঁস, মুরগি, ছাগল পেলেও খায়। আবাসস্থলে খাবার না পেলে এরা লোকালয়ে আসে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সব ধরনের প্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।