মাছ চাষে সাফল্য, বদলে গেছে পুরো গ্রাম

গ্রামের যুবকেরা এখন আর বসে নেই। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি ধানখেতেও মাছ চাষ করে আয় করছেন।

জেলেদের সঙ্গে নিজের পুকুরে মাছ ধরায় ব্যস্ত সফল মৎস্যচাষি সফিকুল ইসলাম (মাছ হাতে)। সম্প্রতি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কুর্শা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৮ শতাংশ জমি চাষ করে আর দিনমজুরের আয়ে সংসার চলত না সফিকুল ইসলামের। বিপদে পড়লে অন্যের কাছে হাত বাড়াতে হতো। কাজ না পেলে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে প্রায় দিনই উপোস দিতে হতো। এমন অবস্থায় ২০০৯ সালে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে নামেন মাছ চাষে। এরপর আর উপোস থাকতে হয়নি সফিকুলের পরিবারকে। বর্তমানে মাছ চাষ করে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেন তিনি।

সফিকুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা থেকে এক কিলোমিটার দূরের পূর্ব কুর্শা গ্রামে। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে যাওয়ার পথে গ্রামে ঢুকেই অন্যরকম দৃশ্য চোখে পড়ে। গ্রামের মাঠজুড়ে অসংখ্য পুকুর। গ্রামের নারী–পুরুষ সবাই কর্মব্যস্ত। কেউ পুকুরে মাছ ধরছেন, কেউ মাছের খাদ্য সরবরাহ করছেন। সফিকুল ইসলামের সফলতা দেখে গ্রামের অন্যরাও ঝুঁকে পড়েছেন মাছ চাষে। আর এতেই গ্রামটির চিত্র পাল্টে গেছে বলে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির পাশের পুকুরে জেলেদের সঙ্গে তিনি মাছ ধরায় ব্যস্ত। পরিচয় পেয়ে পুকুর থেকে উঠে এসে মাছ চাষের গল্প শোনান তিনি।

চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সফিকুল। সংসারের অভাবের কথা শুনে পাশের বুড়িরহাট গ্রামের মনির হোসেন তাঁকে মাছ চাষের পরামর্শ দেন। ২০০৯ সালে স্ত্রীর গয়না বিক্রির ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে মাছ চাষে নামেন তিনি। গ্রামের জিকরুল হোসেনের ৫০ শতাংশের একটি পুকুর ১০ হাজার টাকায় ইজারা নেন। রংপুর ও সৈয়দপুর মৎস্য উৎপাদন খামার থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, সরপুঁটির পোনা এনে পুকুরে ছাড়েন। প্রথম বছরেই খরচ বাদে লাভ হয় ৬৫ হাজার টাকা।

এরপর পুকুরের আয়তন বাড়িয়ে দেন সফিকুল। লিজ নেন আরও দুটি পুকুর। বর্তমানে চারটি পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি পোনা মাছ বিক্রির ব্যবসা করছেন তিনি। লাভের টাকায় সফিকুল পাকা বাড়ি করেছেন। ৫৫ শতাংশ জমি কিনেছেন। সেই জমিতেও পুকুর করে করছেন মাছের চাষ।

সফিকুলের দেখানো পথে হেঁটে এখন গ্রামের লাল কাজী, মাহাবুল হোসেন, কাজী আবদুর রাজ্জাক, কাজী জিকরুল হক এখন মাসে গড়ে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন। দুলাল হোসেন, আবদুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, রাজু আহম্মেদসহ অনেকে এখন মাছের খামারের মালিক। পরামর্শের প্রয়োজন হলে তাঁরা সফিকুলের শরণাপন্ন হন।

বেলাল হোসেন ৪ বছর আগে নিজের ৭ বিঘা জমিতে শুধু ধান চাষ করে ১০ সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতেন। সফিকুলকে দেখে ২০১৮ সাল থেকে দুই বিঘা জমিতে দুটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে এক বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। এ টাকায় আরও দুটি পুকুর খনন করে এখন চারটি পুকুরে মাছের চাষ করে বছরে তিন লাখ টাকা আয় করছেন।

উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, সফিকুল ইসলাম মাছচাষির মডেল। মৎস্য বিভাগ থেকে তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁকে দেখে গ্রামের অনেকেই মাছ চাষে ভাগ্যবদল করেছেন। এ গ্রামের মাছ ও পোনা বাইরের জেলাগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।