‘মাঝনদীতে ফেরির সামনের ছিদ্র দিয়ে পানি উঠতে শুরু করে’

এক পাশে কাত হয়ে ডুবে যায় ফেরি আমানত শাহ। বুধবার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেছবি: আলীমুজ্জামান

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে নোঙর করা মাত্রই ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ–এ পানি উঠতে শুরু করে মাঝনদীতে থাকতেই। এ সময় ফেরিতে ছিলেন যাত্রী আবদুর রাজ্জাক। প্রথম আলোর প্রতিনিধির কাছে সে সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

রাজ্জাক জানান, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাট থেকে ফেরিটি যখন মাঝনদীতে পৌঁছায়, তখনই সামনের দিকে ডান পাশে থাকা এক ছিদ্র দিয়ে পানি উঠতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ফেরির ভেতর পানি জমে যায়। এ সময় পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ ১৭টি গাড়ি, দুটি প্রাইভেট কার ও ৮-১০টি মোটরসাইকেল ছিল ফেরিতে।

ফেরিতে পানি উঠতে দেখে স্টাফসহ যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা চিৎকার শুরু করেন। পরে ফেরির মাস্টার ইঞ্জিনের গতি বাড়িয়ে দেন। অল্প সময়ের মধ্যে ফেরিটি পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে পৌঁছায়। পন্টুনের সঙ্গে রশি না বাঁধতেই ফেরির ডালা নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় দুটি ট্রাক ফেরি থেকে নেমে যায়।

আরেকটি ট্রাক অর্ধেকটা নামার পরই ফেরি কাত হয়ে যায়। এ সময় ট্রাকটি পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যায়। একই সঙ্গে ফেরিতে থাকা সব পণ্যবাহী গাড়ি একটার ওপর আরেকটা উঠে পড়ে। একসময় সব পণ্যবাহী গাড়ি, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল নদীতে পড়ে যায়।

এর আগে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাট থেকে বুধবার সকাল নয়টার দিকে রো রো (বড়) ফেরি আমানত শাহ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। পৌঁছায় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শী আরও কয়েকজন জানান, ফেরিটি দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফুল লোড নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তখন থেকেই ১৭টি পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে ফেরিটি ডুবো ডুবো ভাব ছিল।

দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ফেরি আমানত শাহ। বুধবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

ফেরিতে থাকা আরেক প্রত্যক্ষদর্শী অমল কান্তি ভট্টাচার্য আহত অবস্থায় পাটুরিয়া ঘাটে ওঠেন। তাঁর সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন নদীতে পড়ে গেছে। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির ফোন থেকে বাসায় বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্ত্রী দেবযানী ভট্টাচার্য।

অমল কান্তি বলেন, সকাল সাড়ে আটটার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে তিনি ঢাকায় যাচ্ছিলেন। দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে ফেরি ভিড়তে দেখে তিনি উঠে পড়েন। ফেরিটি মাঝনদীতে আসার পরই পানি উঠতে দেখে সবাই চিৎকার করতে থাকেন। পরে ঘাটে ফেরি ভিড়তেই দেখেন কাত হয়ে যাচ্ছে। কাত হয়ে গেলে তিনি ঘাটেই পড়ে যান। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তবে মোটরসাইকেল, মুঠোফোনসহ সব নদীতে পড়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে শাহ আমানত কাত হয়ে ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মানিকগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা একাধিক দল উদ্ধারে কাজ করছে। মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করছে। ভাসমান কারখানা মধুমতির পেছন দিকে নদীতে ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে পাঁচটি স্থানে পাঁচটি কাভার্ড ভ্যান ডুবন্ত অবস্থায় আটকে আছে।

উদ্ধার করা হয় ফেরি থেকে নদীতে পড়ে যাওয়া একটি ট্রাক। পাটুরিয়া ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জিল্লুর রহমান বলেন, ফেরিতে বাড়তি কোনো গাড়ি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ছিল কি না জানা নেই। তবে শুনেছেন, কয়েকটি মোটরসাইকেল ছিল। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হচ্ছে।

দৌলতদিয়া থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার কমান্ডার এস এম ছানোয়ার হোসেন বলেন, বেলা একটার দিকে একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফেরির পাটাতন ফেটে পানি ওঠায় এটি ডুবে যায়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন