দাইন্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়
মাঠে হাট,পাঠদান ব্যাহত
একাধিকবার এই হাট স্কুলের মাঠ থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে তা সফল হয়নি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতি বুধবার হাট বসে। এতে হাটবারে ব্যাহত হয় পাঠদান কার্যক্রম। বছরের পর বছর চলছে এই অবৈধ হাট। একাধিকবার এই হাট স্কুলের মাঠ থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে তা সফল হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের দাইন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয়। ওই এলাকার মোহাম্মদ আলী মিয়া নামের এক ব্যক্তি এই স্কুলের জন্য জমি দান করেন। স্কুলটি ১৩৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে স্কুলের সামনের রাস্তার পাশে প্রতি বুধবার দু-চারটি দোকান বসত। ক্রমেই দোকানের সংখ্যা বাড়তে থাকে ও বেচাকেনা জমে ওঠে। এর কয়েক বছর পরেই রাস্তার পাশ ছেড়ে স্কুলের মাঠে দোকান বসতে শুরু করে। এখন প্রতি বুধবার দুই শতাধিক দোকান বসে স্কুলের মাঠে।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এই হাট সরকার অনুমোদিত নয়, এটি অবৈধভাবে চলছে।
গত বুধবার ওই বিদ্যালয় মাঠে দেখা যায়, সীমানাপ্রাচীরের ভেতর বসেছে দুই শতাধিক দোকান। স্কুলে দোতলা ভবনে এবং পাশের টিনশেড একটি কক্ষে চলছে ক্লাস। এই দুই ভবনের সামনেই বসেছে সবজির দোকান। শত শত ক্রেতা–বিক্রেতা মাঠজুড়ে। দক্ষিণ পাশে হাঁস, মুরগি ও কবুতর নিয়ে বসে ২০–২৫ জন বিক্রেতা। কয়েকজন নরসুন্দর অস্থায়ী সেলুন বসিয়ে কাজ করছেন। পূর্ব অংশজুড়ে মাছ, মসলা, ফলসহ বিভিন্ন দোকান। আর উত্তর দিকে গাছের চারা, বাঁশ ও বাঁশের তৈরি সামগ্রী নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।
স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক–শিক্ষার্থী জানায়, বুধবার সকাল থেকেই মাঠে দোকান নিয়ে আসতে শুরু করেন বিক্রেতারা। অনেক ভ্যান, রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে তাঁরা মাঠে প্রবেশ করেন। দুপুরের আগেই ক্রেতা-বিক্রেতায় পুরো স্কুল মাঠ ভরে যায়। শত শত মানুষের হইচই, ওষুধ বিক্রেতাদের মাইকে ক্রেতাদের ডাকাডাকি ইত্যাদি নানা শব্দে স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ আর থাকে না। হাটুরে লোকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টয়লেট অবাধে ব্যবহার করে অপরিচ্ছন্ন করেন। ছুটির পর হাটের লোকজনের ভিড় ঠেলে শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে বের হতে হয়। হাট শেষ হলে ময়লা–আবর্জনায় ভরে থাকে পুরো মাঠ।
ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন উদ্দিন জানায়, হাটের দিন হইচই লেগে থাকে। লেখাপড়া হয় না। এদিন অনেকেই স্কুলে আসে না।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া জানায়, হাটের পর ময়লা–আবর্জনায় মাঠ ভরে থাকে। স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।
প্রধান শিক্ষক নাসিমা খান জানান, কয়েক বছর আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিন এসে স্কুল মাঠে হাট দেখে গেছেন। তিনি সে সময় হাটটি উচ্ছেদে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদ হয়নি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোমেন মিয়া জানান, বিভিন্ন সময় এ হাট সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে সরানো যায়নি।