মাদকের টাকা জোগাতে সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ

পুলিশের প্রচেষ্টায় ছেলেকে ফিরে পেলেন লামিয়া আক্তার। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাবুরপাড়া গ্রামে গতকাল সোমবার
ছবি: সংগৃহীত

দেড় বছরের ছেলেকে পাশে নিয়ে গত শনিবার রাতে ঘুমাতে যান লামিয়া আক্তার। সকালে উঠে দেখেন পাশে ছেলে নেই। স্বামী ইমরান হোসেনও লাপাত্তা। পরে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় থানায় এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন লামিয়া। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক নিঃসন্তান নারীর কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাবুরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লামিয়া ও ইমরান। ইমরান পেশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর লামিয়া এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করেন। ওই দম্পতির দুই সন্তান। বড় মেয়ের বয়স পাঁচ বছর এবং ছেলে সন্তানের বয়স দেড় বছর।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদকের টাকা জোগাতে প্রায়ই ইমরান এলাকায় ছোটখাটো অপরাধ করতেন। টাকার জন্য স্ত্রীকেও চাপ দিতেন। টাকা দিতে না পারলে প্রায়ই মারধর করতেন স্ত্রীকে। শনিবার রাতে দুই সন্তানকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন লামিয়া। রাতে ইমরান স্ত্রীকে ঘুমের মধ্যে রেখে ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। পরে রোববার সকালে তাঁর পূর্বপরিচিত মতলব উত্তর উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা নিঃসন্তান রুমা আক্তারের কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে লামিয়া দেখতে পান ছেলে ঘরে নেই। তাঁর স্বামীরও খোঁজ নেই এবং তাঁর মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে লামিয়ার সন্দেহ তাঁর স্বামীর দিকে যায়। পরে গতকাল সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে মতলব দক্ষিণ থানায় মৌখিক অভিযোগ করেন।

মতলব দক্ষিণ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুহুল আমীন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ চালান। গতকাল রাত নয়টায় অভিযান চালিয়ে রুমা আক্তারের কাছ থেকে ওই সন্তান উদ্ধার করেন এবং রাত ১০টায় তাকে লামিয়ার কাছে ফিরিয়ে দেন। রুমা আক্তারের কাছ থেকে জানতে পারেন, ইমরান তাঁর (রুমা) কাছে ২০ হাজার টাকায় ওই শিশুসন্তান বিক্রি করেন।

লামিয়া বলেন, তাঁর স্বামী মাদকাসক্ত। নেশার টাকা জোগাড় করতেই তিনি গোপনে ওই কাজ করেছেন। এখন সন্তান ফিরে পেয়ে তাঁর কষ্ট দূর হয়েছে। এ জন্য থানার পুলিশকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

রুমা আক্তার বলেন, ইমরান তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে এ কাজ করেছেন, তা তিনি জানতেন না। জানলে এভাবে বাচ্চাটি নিতেন না।

মতলব দক্ষিণ থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া বলেন, ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে এখনো মামলা বা লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। ইমরান এখনো আত্মগোপনে আছেন। তাঁর ফোনও বন্ধ রয়েছে।