বরগুনার পাথরঘাটা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে গত শুক্রবার রাতে ১৮টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। এসব ট্রলারের ১৬০ জন জেলের মধ্যে ১৪৪ জনকে উদ্ধার করা গেলেও দুজনের মরদেহ উদ্ধার হয় পরের দিন শনিবার। বাকি ১৪ জন জেলে ও দুটি ট্রলার এখনো নিখোঁজ। শীতকালে বঙ্গোপসাগর শান্ত থাকে। গত শুক্রবার আবহাওয়া বিভাগ থেকে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও ঝড়ের কোনো সংকেত ছিল না। শীতকালে হঠাৎ ঝড়ের তাণ্ডব বিষয়ে করণীয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর সঙ্গে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এই সময় (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে) সাগরে ঘূর্ণিঝড় হয়? সর্বশেষ কবে হয়েছিল?
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী: এই সময়ে সাধারণত সাগরে ঘূর্ণিঝড় হয় না। এই সময় সাগর অনেকটাই শান্ত থাকে। এই দুই মাসে সর্বশেষ কবে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল তা জানা নেই।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: শুক্রবার আবহাওয়ার কোনো সতর্কসংকেত? সাগরে জেলেরা কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পান?
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী: ওই দিন ঝড়ের কোনো সংকেত ছিল না। পাথরঘাটা থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরে গেলেই মুঠোফোনের কোনো নেটওয়ার্ক থাকে না। তাই জেলেদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকে না। আর রেডিও সেখানে কাজ করে না। মূলত সাগরে জেলেরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ার মতো কোনো মাধ্যম ব্যবহার করার সুযোগ পান না। তাই ঝড়ের কোনো সংকেত জারি হলে তা জেলেদের কাছে পৌঁছায় না। জেলেরা আকাশ ও পানির গতি-প্রকৃতি দেখে সাগরের ও আবহাওয়ার মেজাজ বুঝে নেন। এ জন্য গভীর সাগরে যাতে মুঠোফোন নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। রেডিওগুলোর কাভারেজের আওতা বাড়ানো প্রয়োজন। উন্নত দেশে যেসব প্রযুক্তির ব্যবহার হয়, সেগুলো সংযোজন করা উচিত।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোতে লাইফ জ্যাকেট ও বয়ার মতো জীবনরক্ষা সরঞ্জাম রাখা হয় না?
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী: শুক্রবার যেসব ট্রলার ডুবে যায়, সেগুলো মূলত গভীর সাগরে মাছ ধরার ট্রলার নয়। উপকূলে মাছ ধরে। এসব ছোট ট্রলারে জীবনরক্ষা সরঞ্জাম একদমই নেই। তবে বড় ও গভীর সাগরে যেসব ট্রলার যায়, সেগুলোতে পর্যাপ্ত বয়া থাকে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সাগরে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় হলে জেলেদের জীবন রক্ষায় কী ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন?
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী: সাগর ও সুন্দরবনের দুবলার চরে একটি উদ্ধার যান জেলেদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। দুবলার চরে ওই উদ্ধার যান থাকলে যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। উদ্যোগটি দুবলার চরে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড বা র্যাবের কাছে দেওয়া হলে সেটি প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা যাবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সাগরে নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী: আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে সাগরে নিখোঁজ জেলেদের লাশ না পাওয়া গেলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা যায় না। ফলে এসব জেলের পরিবারকে কোনো ধরনের আর্থিক প্রণোদনা ও সহায়তা সরকারের পক্ষ থেকেও করা হয় না। এতে নিখোঁজ জেলেদের পরিবার আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। আমরা আইন সংশোধনের দাবি করে আসছি। কিন্তু এখনো এর কোনো অগ্রগতি নেই।