মাপামাপি হয়, সেতু হয় না
‘কত্ত বছর ধরিয়া শুনচু এইঠে একখান বিরিজ (সেতু) হচে। কতবার মাপামাপি ইইল। কিন্তু বিরিজ আর হচেনি।’ কথাগুলো ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের রহরমপুর গ্রামের রমিজ উদ্দিনের (৭২)। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার রাউতনগর এলাকায় কুলিক নদ পার হওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
কুলিক নদের পারে রসুলপুর ও রাউতনগর এলাকার লোকজন জানান, নদের রাউতনগর এলাকার পূর্ব পারে রসুলপুর, বর্মপুর, বারডাঙ্গী, একান্নপুর, বিরাশী, উমরাডাঙ্গী, লেহেম্বাসহ ১১টি গ্রাম আছে। আর পশ্চিম পারে রাউতনগর, কাঠালডাঙ্গী, পদমপুরসহ আরও আটটি গ্রাম এবং রাউতনগর উচ্চবিদ্যালয়, কাঠালডাঙ্গী কৃষি কলেজ, কাঠালডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয় ও কাঠালডাঙ্গী হাট অবস্থিত। তাই পূর্ব পারের শিক্ষার্থী ও কৃষকদের নদ পার হয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও হাটে যেতে হয়। আবার পূর্ব পারে লেহেম্বা, ফকিরহাট, গোগরহাট থাকায় পশ্চিম পারের লোকজনকে মালামাল কেনাবেচা করতে এই পারে যেতে হয়। শুকনো মৌসুমে ওই এলাকার লোকজনকে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষায় নৌকায় চলাচল করতে হয়।
কাঁঠালডাঙ্গী হাটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৫৪) জানান, কুলিক নদের রাউতনগর এলাকা ছাড়া অন্য পথে কাঠালডাঙ্গী হাটে যেতে হলে ৯-১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তাই তিনি দোকানের মালামাল নিয়ে পানি দিয়ে নদ পার হন। এতে তাঁর অনেক কষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘এইঠে একখান ব্রিজ হইলে জীবনটা শান্তি পাইবে।’গতকাল সকালে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা–ভ্যানে লোকজনকে নদ পার হতে দেখা যায়। সাঁকোর একপাশে বসে শামসুল হক নামের একজন নদ পারাপারের টাকা আদায় করছিলেন। তিনি জানালেন, ৪২ বছর ধরে তিনি নিজের খরচে সাঁকো তৈরি করে মানুষের পারাপারের ব্যবস্থা করছেন। বিনিময়ে যে যা দেন, তা নেন।
এ সময় বিরাশী গ্রামের কৃষক রমজান আলী (৫৬) বলেন, ‘সেতুর জন্য সরকারি লোকজন এসে মাপামাপি করার সময় আশ্বস্ত হই। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও আশ্বাস দেন। কিন্তু সেতু হয় না। বর্ষা মৌসুমে নদ পারাপারে ঝুঁকি থাকে। অনেকবার নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, গত বছর নদ পার হওয়ার সময় তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে সাঁকো থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।
রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম বলেন, কুলিক নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন, রাউতনগর এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।