কুমিল্লা ও নরসিংদী থেকে রাজশাহীতে এসে পুলিশের হয়রানির শিকার হন দুই ব্যক্তি। তাঁরা সম্পর্কে জামাই ও শ্বশুর। রাজশাহী নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল পুলিশ বক্সের সদস্যরা তাঁদের ধরে পুলিশ বক্সে ঢোকানোর চেষ্টা করেন। টানাটানির একপর্যায়ে শ্বশুর তাঁদের হাত ফসকে বেরিয়ে যান। জামাইকে ধরে পকেটের সব টাকা কেড়ে নেওয়া হয়।
বাড়িতে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে আরও টাকা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সাময়িক বরখাস্তের এ আদেশ জারি করেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা সবাই নগরের বোয়ালিয়া থানার শিরোইল বাস টার্মিনাল পুলিশ বক্সে কর্মরত ছিলেন। তাঁরা হলেন সহকারী শহর উপপরিদর্শক (এটিএসআই) নাসির উদ্দিন, এএসআই মো. সেলিম, কনস্টেবল মো. শাহ আলম, সারোয়ার আলম, রিপন আলী ও শ্রী শংকর চন্দ্র।
ভুক্তভোগী শ্বশুরের নাম মো. খোরশেদ গাজী (৪২) ও জামাইয়ের নাম মো. শাহীন (৩২)। খোরশেদের বাড়ি কুমিল্লায়। আর শাহীনের বাড়ি নরসিংদী সদরে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, সাময়িক বরখাস্ত করে এই পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগও হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বিভাগীয় তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী খোরশেদ গাজী জানান, তাঁর নামে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য গত মঙ্গলবার তিনি রাজশাহীতে আসেন। সঙ্গে তিনি তাঁর জামাইকে এনেছিলেন। হাজিরা শেষে ওই দিন নওগাঁর মান্দায় এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। গত বুধবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য শিরোইল বাস টার্মিনালে আসেন। রাত আটটার দিকে পুলিশ বক্সের সদস্যরা তাঁদের ধরে পুলিশ বক্সে ঢোকানোর চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি পুলিশের হাত থেকে ছুটে যান। তাঁর জামাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি করে তাঁর কাছে দুটি ডার্বি সিগারেট পায়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে গাঁজা সেবনের অভিযোগ আনা হয়। পুলিশ তাঁর পকেটের এক হাজার টাকা বের করে নেয়। ছেড়ে দেওয়ার জন্য আরও টাকা চায়।
জামাইকে দিয়ে তাঁকে ফোন করায়। ফোনে জামাই ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রথমে ২০ হাজার, পরে ১০ হাজার, ৫ হাজার, অগত্যা ২ হাজার টাকা চায়। কিন্তু তাঁর কাছে কোনো টাকা ছিল না। গাড়ি ভাড়ার এক হাজার টাকা জামাইয়ের কাছেই ছিল। পরে বাড়িতে ফোন করে পুলিশ ৪ হাজার ৬০০ টাকা নিয়ে রাত প্রায় ১০টার দিকে জামাইকে ছেড়ে দেয়।
বাড়ি থেকে যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছিল, সেটি নিয়ে মো. শাহীন জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন করেন। সেখান থেকে তাঁকে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নম্বরটি দেওয়া হয়। তিনি তাঁর নম্বরে ফোন করলে তিনি এক ঘণ্টা পর কথা বলতে চান। রাতে আর তিনি কথা বলেননি। রাতে তাঁরা স্টেশনে কাটিয়ে সকালে পুলিশ বক্সে গিয়ে কনস্টেবল সেলিমের কাছে বাড়িতে যাওয়ার বাস ভাড়া চান। পুলিশ তাঁকে মাদক মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ‘ভাগ শালা’ বলে খেদিয়ে দেন।
বেলা একটার দিকে তাঁরা ন্যাশনাল ট্রাভেলসের একটি বাসে উঠে বসেন। তখন বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ তাঁদের ফোন দেন। কিন্তু বাসের লোক তাঁদের টিকিট বাতিল করতে রাজি না হলে তাঁরা বাস থেকে নামেননি। বাস ছেড়ে দেয়।
কিছুক্ষণ যাওয়ার পর পুলিশ গিয়ে বাস থামিয়ে তাঁদের নিয়ে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সব শুনে পুলিশ তাঁদের টিকিটের টাকা দেন। আগের টিকিটের টাকাটাও বাস কাউন্টার থেকে তুলে দেন। সসম্মানে বাস কাউন্টারে দিয়ে যান।
তবে নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানিয়েছেন, তাঁরা বুধবার সকাল সাতটার দিকে তাঁকে ফোন দিয়েছিলেন। তখন তিনি ঘুমের মধ্যে ছিলেন। তাঁদের থানায় আসতে বলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা আসেননি। একপর্যায়ে ফোন করলে তাঁরা বলেন, পুলিশকে বললে তাঁদের ঝামেলা হবে। তাই তাঁরা বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। পরে বাস থেকে তাঁদের নামিয়ে আনা হয়।