ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন কোতোয়ালকে গুলি করার তিন দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ আজ বৃহস্পতিবারও ওই ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান আসামি পৌর কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নতুন করে আওয়ামী লীগের ওই নেতার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তাঁর মা মনোয়ারা বেগম। এসব বিষয় নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা, মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১১ নভেম্বর শরীয়তপুর সদরের তুলাসার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের পরিবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জামাল হোসাইনের পক্ষে কাজ করে। এর জের ধরে শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী ও তাঁর সমর্থকেরা ১৪ নভেম্বর জাকিরের ভাই মেহেদী হাসানকে কুপিয়ে আহত করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা না নিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাকির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থানায় গিয়ে তাঁকে মামলা করার পরামর্শ দেন এবং পুলিশকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাকির হোসেন মামলা করার জন্য পালং মডেল থানায় যান। খবর পেয়ে বাচ্চু ব্যাপারী থানায় গিয়ে জাকিরকে ভয়ভীতি দেখান। এরপর বাচ্চু ব্যাপারী তাঁর লোকজন নিয়ে থানার বাইরে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে জাকির তাঁর ভাই মনিরকে নিয়ে রিকশায় শহরের বটতলা মসজিদ মার্কেটে যান। সেখানে বাচ্চু ও তাঁর সমর্থকেরা তাঁদের দুই ভাইকে কুপিয়ে আহত করেন। এ সময় বাচ্চু ব্যাপারী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জাকিরের ডান পায়ে গুলি করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে বুধবার জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় জাকির হোসেনের মা মনোয়ারা বেগম মঙ্গলবার রাতে পালং মডেল থানায় মামলা করেছেন। মামলায় বাচ্চু ব্যাপারী, তাঁর ভাই চুন্নু ব্যাপারী, আবু বকর ব্যাপারীসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মেহেদী হাসানকে কোপানোর অভিযোগে জাকির হোসেনের করা মামলায় বাচ্চু ব্যাপারীসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু বাচ্চু ব্যাপারীসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জাকিরের পরিবারের সদস্যরা।
জাকির হোসেনের মা মনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। নৌকার সমর্থন করার কারণে দলে অনুপ্রবেশকারী বাচ্চু ব্যাপারী আমার তিন সন্তানকে কুপিয়েছে। পুলিশ কেন তাকে ধরছে না? সে (বাচ্চু ব্যাপারী) প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেবে, লুটপাট করবে—এমন হুমকিও দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুলতান হোসেন মুন্সি বলেন, ‘আমরা যারা স্বচ্ছ ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে রাজনীতি করতে চাই, তারা এখন আতঙ্কিত। রাজনীতির ভেতরে থাকা দুর্বৃত্তদের কেন পুলিশ ধরছে না, তা–ও বুঝছি না। সর্বত্রই আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এ লড়াইতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া ওই দুই ঘটনায় করা মামলার আসামিদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।