মায়ের অভিযোগে মাদকাসক্ত ছেলেকে ৬ মাসের কারাদণ্ড
বীর মুক্তিযোদ্ধা চুন্না মিয়া ও শাহিদা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে লিটন মিয়া (৩২) দ্বিতীয়। বয়স ২০ পেরোতেই শান্ত ও বিনয়ী লিটন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মিশে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মাদকদ্রব্য কেনার টাকা জোগাতে পরিবারে নানা অত্যাচার শুরু করেন তিনি। এমনকি মায়ের শরীরে হাত তুলতেও দ্বিধা করেননি লিটন।
মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লিটনের মা শাহিদা বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিকুর রহমানের দ্বারস্থ হন। এরপর ইউএনওর নির্দেশে পুলিশ গিয়ে ভৈরবপুর এলাকা থেকে লিটনকে ইয়াবা সেবনরত অবস্থায় ধরে আনে। সন্ধ্যার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর এলাকার এ ঘটনা ঘটেছে।
লিটন মিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা চুন্নু মিয়ার বাড়ি পৌর শহরের ভৈরবপুর এলাকায়। আট বছর আগে চুন্নু মিয়া মারা যান। এর পর থেকে স্বামীর নামে পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় সংসার চালান শাহিদা বেগম। আগে লিটন ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে ব্যবসা করতেন। এরপর তিনি একে একে গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল ও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন। নেশার টাকা জোগাতে একপর্যায়ে ঘরের বিভিন্ন জিনিস বেচতে শুরু করেন।
বিয়ে করালে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে ভেবে ১০ বছর আগে লিটনকে বিয়ে করানো হয়। সংসারে দুই সন্তান আসে। কিন্তু মাদকাসক্ত লিটনের সংসারের প্রতি উদাসিনতা এবং শারীরিক নির্যাতনের কারণে স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সম্প্রতি মায়ের ওপর লিটনের অত্যাচার বেড়ে যায়। নেশার টাকা জোগাতে অন্যের বাড়িতেও চুরি করতে শুরু করেন তিনি। শেষে বাধ্য হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় শাহিদা যান ইউএনওর কাছে।
অসহায় মা শাহিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবা আমার এই ছেলে খুবই শান্ত ও ভদ্র আছিল। বন্ধুদের পাল্লায় পইরা শেষ। এহন জেলে দিছি। দেহি নেশা ছাড়তে পারে কি না।’
জানতে চাইলে ইউএনও সাদিকুর রহমান বলেন, মাদকের কারণে অনেক পরিবারে অশান্তি চলছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রায়ই সন্তানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিয়ে তাঁর কাছে এসে প্রতিকার চাচ্ছেন অভিভাবকেরা।