মায়ের সঙ্গে অপহরণ নাটক সাজিয়ে ঘোরাঘুরির সময় ধরা পড়ল তরুণ
টাকার জন্য মায়ের সঙ্গে অপহরণের নাটক সাজিয়ে পাঁচ দিন আত্মগোপনে থাকার পর এক তরুণকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরে ঘোরাঘুরি করার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তামিম মিয়া (২১) নামের ওই তরুণের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া-আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁকে কাউন্সেলিংয়ের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও ওই তরুণের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তামিমের বাবা বেঁচে নেই। তাঁরা এক ভাই ও এক বোন। বোনটি প্রতিবন্ধী। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার পর আর স্কুলমুখী হননি তামিম। কাজেও মনোযোগ নেই। মা আফিয়া খাতুন অনেক কষ্টে সংসার চালান। এর মধ্যে নানা অজুহাত সামনে এনে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতেন। সর্বশেষ শনিবার তামিম মায়ের কাছে আবদার জানান, রোজার সময় জুতার কারখানায় শ্রমিকের চাহিদা বেশি, এ জন্য তিনি ঢাকায় জুতার কারখানায় কাজ করতে যাবেন। ঈদের আগে ফিরবেন। এ জন্য তাঁর এখন নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। ছেলের কাজে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়ে মা খুশি হন এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে দেন।
শনিবার তামিম বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর রোববার ফোন আসে। এক নারী তামিমের মাকে বলেন, তাঁর ছেলে অপহৃত হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকা চান ওই নারী। দ্রুত টাকা দিতে না পারলে তামিমের বেঁচে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ কথা শুনে মা টাকার সন্ধানে এবাড়ি-ওবাড়ি গিয়ে ব্যর্থ হন। শেষে প্রতিবেশীদের পরামর্শে মা পুলিশের সহযোগিতা চান। পুলিশ তামিমকে উদ্ধার করার পর জানতে পারেন, টাকার জন্য তিনি অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন।
তামিমের মা আফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়েটি প্রতিবন্ধী। ভাতা পায়। সংসারে ওই টাকাও আমার কাছে বড় কিছু। এ অবস্থায় ছেলের চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেক কিছু বিক্রি করতে হয়েছে। এখন আমার তিন বেলার খাবার জোগাড় করতে খুব কষ্ট হয়।’
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, মূলত প্রেমিকার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর অর্থের প্রয়োজন মেটাতে তামিম মায়ের সঙ্গে অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন। অভিযোগটি পাওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নেয় পুলিশ। তাতে দেখা যায়, তামিম ঢাকায় যাননি। কিশোরগঞ্জেই অবস্থান করছেন। ধরার পর তামিম পুলিশকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলেছেন। পরে কাউন্সেলিং করে তামিমকে মায়ের কাছে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে তামিম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘কাজটি ঠিক হয়নি। ভুল করেছি। আর হবে না।’