মির্জাপুরে সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি পুনর্বহালের দাবি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর রেলস্টেশন। ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর রেলস্টেশনে ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি গত বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে বন্ধ। স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংসদ মো. একাব্বর হোসেন ওই দুটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি পুনর্বহালের জন্য গত বছরের ২৮ জানুয়ারি নির্দেশনাপত্র (ডিও লেটার) দেন। অথচ দীর্ঘ পৌনে দুই বছর পার হতে চললেও ট্রেন দুটির যাত্রাবিরতি পুনর্বহাল হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের জুনে এ সড়কে রেল চলাচল শুরু হয়। একই বছরের ১৭ আগস্ট সুন্দরবন ও ২০০৭ সালের ৭ অক্টোবরে চিত্রা এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা-খুলনার মধ্যে চলাচল শুরু করে। শুরু থেকেই দুটি ট্রেনের মির্জাপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি ছিল।

এতে এলাকাবাসী, মির্জাপুরে বসবাসরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কুমুদিনী হাসপাতালে যাতায়াতকারী রোগী, ভারতেশ্বরী হোমস, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, মহেড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী এবং মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকেরা সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। ট্রেন দুটির সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল সোম ও বুধবার।

মির্জাপুর রেলস্টেশন হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু রেল–সংযোগ সড়কে রাজশাহী এক্সপ্রেস নামের লোকাল ট্রেনসহ ১৯ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। করোনা সংক্রমণের কারণে বেনাপোল, সিরাজগঞ্জ ও মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বর্তমানে বন্ধ। মির্জাপুরে ওই তিনটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি এমনিতেই ছিল না। অন্য ১৬ জোড়া ট্রেনের মধ্যে মির্জাপুরে ইশ্বরদী-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী রাজশাহী এক্সপ্রেস লোকাল ট্রেন, টাঙ্গাইল-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী টাঙ্গাইল কমিউটার ও রাজশাহী-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি রয়েছে।

মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা খুবই মর্মাহত; যেখানে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ, মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের মতো বহু নামী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গোড়াই শিল্পাঞ্চলে কর্মরত প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের অধিকাংশের যাতায়াতের মাধ্যম ট্রেন। মির্জাপুরে যেখানে আরও আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি চালু করা উচিত ছিল, কিন্তু তা না করে দুটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।’

মির্জাপুর বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, তাঁরা ভোরে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে নেমে দোকানের মালামাল কিনে তা ট্রান্সপোর্টে দিয়ে চিত্রা এক্সপ্রেসে মির্জাপুরে ফিরে আসতেন। কিন্তু অনেক দিন ধরে তাঁরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

মির্জাপুরের রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ জয় প্রকাশ জানান, আগে ট্রেন দুটিতে প্রতিদিন অন্তত ৩০০ যাত্রী আসা-যাওয়া করত। ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধের পর মির্জাপুরবাসীর মধ্যে দুর্ভোগ নেমে আসে। তিনি ট্রেন দুটির যাত্রাবিরতি পুনর্বহালের দাবি করেন।

উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শামীম আল মামুন বলেন, এমপি সাহেব ডিও লেটার দিয়েছেন। তারপরও ট্রেন না থামানো খুবই দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে জানতে রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টের (পশ্চিম) মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) মিহির কান্তি গুহ জানান, ‘ট্রেনের যাত্রাবিরতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। আমরা শুধু এটি বাস্তবায়ন করে থাকি।’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মির্জাপুরের সাংসদ মো. একাব্বর হোসেন বলেন, মির্জাপুর উপজেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোসমের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ছাড়া গোড়াই শিল্পনগরীতে কর্মরত হাজারো শ্রমিক ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। মির্জাপুর রেলস্টেশনে ট্রেন দুটির যাত্রাবিরতি বন্ধ হওয়াতে তাঁদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ট্রেনের যাত্রাবিরতি পুনর্বহালের জন্য দেড় বছর আগে দেওয়া ডিও লেটারটি রেলমন্ত্রী গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে তাঁর প্রত্যাশা। তিনি বিষয়টি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উত্থাপন করবেন।