চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাকালীন ঘরবন্দী থাকায় ও পরিশ্রম না করার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ বাড়ার এ উদ্বেগজনক পর্যায়ে আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার সারা দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও করোনা প্রতিরোধে সচেতন হোন।’ চুয়াডাঙ্গায় এ উপলক্ষে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও নিঃখরচায় ডায়াবেটিস নির্ণয়ের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

ডায়াবেটিক রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ বিষয়ে তাঁদের পরামর্শ হচ্ছে, ডায়াবেটিস রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে নিজের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা ডায়াবেটিক সমিতি ১৯৯৮ সালে জেলার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। বারডেমের অধীন এ হাসপাতাল ২৪ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত উচ্চবিত্তরা ঢাকায় বারডেমে বা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিলেও এ জেলার সাধারণ রোগীদের প্রধান ভরসা এ ডায়াবেটিক হাসপাতাল।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, মাত্র ২০ টাকা দিয়ে নাম নিবন্ধন করে ডায়াবেটিস রোগীরা এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পান। সমিতির নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা ইতিমধ্যে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। ২০২১ সালে হাসপাতালে নিবন্ধিত নতুন রোগীর সংখ্যা ৭৪৮। বর্তমানে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে নিয়মিত রোগী দেখছেন।

চুয়াডাঙ্গা ডায়াবেটিক হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালে এ হাসপাতালে যেখানে ১২ হাজার ৬১৪ জন ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন, সেখানে ২০২১ সালে সেবা নিয়েছেন ১৪ হাজার ৩১২ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে অতিরিক্ত ১ হাজার ৬৯৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পূর্ব কমলাপুর গ্রামের গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৭ সাল থেকে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। শুরু থেকেই তিনি চুয়াডাঙ্গা ডায়াবেটিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। সেবার মান নিয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিসের মাত্রা ৮–এ নেমে আসে। শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য যেকোনো কারণে একটু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেই মাত্রা বেড়ে ২২-এ চলে যায়। তাই কষ্ট করে হলেও নিয়ম মানতে হয়।’

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখছেন নাহিদ ফাতেমা রতনা। তিনি জানালেন, করোনাকালে ঘরবন্দী থাকায় নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার বেড়েছে। উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তরা ঢাকায় বারডেমে চিকিৎসা নেন। তবে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং সাধারণ রোগীদের অন্যতম প্রধান ভরসা এই হাসপাতাল।

ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা ক্রমে সবাই ঘরকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে ফিট রাখতে আগে অনেকেই বাইরে হাঁটাচলা করতেন, খেলাধুলা করতেন, নিজের কাজ নিজে করতেন। এখন আর ঠিক ওইভাবে করা হয়ে থাকে না। একটু সময় পেলেই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘরে বসে থাকেন। সেই সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালও অন্যতম কারণ।’

হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে তিনি সপ্তাহে ছয় দিন রোগী দেখেন। এসব দিনে হাসপাতালটিতে দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের কারণে কিছুটা কম হলেও বাকি নয় মাস ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়েই চলে।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে হলে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ, কায়িক পরিশ্রম বৃদ্ধি এবং নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কার্বোহাইড্রেড গ্রহণ কমাতে হবে। অলস জীবন যাপন করলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতেই হবে। তাই সচেতনতার বিকল্প নেই।’