মুন্সিগঞ্জে আ.লীগের এক পক্ষের হামলায় আরেক পক্ষের একজন নিহত

মো. জুয়েল ফকিরের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের সদস্যদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় জমি থেকে আলু হিমাগারে নেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের হামলায় আরেক পক্ষের একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত চারটার দিকে উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নে ফকিরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. জুয়েল ফকির (২৮) ওই এলাকার বাসিন্দা। তিনি মুন্সিরহাট এলাকায় ফলের ব্যবসা করতেন।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের প্রতিপক্ষ চরকেওয়ার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মন্টু দেওয়ান ও তাঁর লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মন্টু দেওয়ান বলেন, ওই পরিবারের লোকজনই জুয়েলকে হত্যার পর এখন তাঁদের ফাঁসাতে চাইছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চরকেওয়ার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ ফকির ও সাধারণ সম্পাদক মন্টু দেওয়ানের বংশের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে এর আগে তাঁদের মধ্যে কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়ভাবে সেটি মীমাংসাও করা হয়। কয়েক দিন ধরে জমি থেকে আলু ট্রলিতে করে হিমাগারে নেওয়াকে কেন্দ্র করে এই পক্ষগুলোর মধ্যে নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ফকির বংশের লোকজনকে আলু নিতে বাধা দিচ্ছিলেন দেলোয়ার ঢালী ও দেওয়ান বংশের লোকজন। এ নিয়ে গত বুধবার তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। রাতে ফকির বংশের ওপর ঢালী ও দেওয়ান বংশের লোকজন হামলা করেন। ফকির বংশের বাড়িঘরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং বাড়িঘর আগুন দেন। আজ ভোরে জুয়েল ফকিরকে হত্যা করা হয়।

জুয়েল ফকিরের ভাবি সুমি বেগম বলেন, ‘হামলা করে আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। জুয়েল বাঁচার জন্য ভোররাত চারটার দিকে মসজিদের দিকে যাচ্ছিল। সেখান থেকে মন্টুর পক্ষের লোকজন ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। ভোরে গিয়ে জমির মধ্যে দেবরের লাশ পেয়েছি।’

জুয়েলের বাবা হাফিজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘খুব কষ্ট করে ছেলেদের বড় করেছি। তিনটা ছেলে আমার। জুয়েল মেজ ছিল। সে ফলের ব্যবসা করত। হিমাগারে আলু নেওয়াকে কেন্দ্র করে আমার ছেলেটাকে মন্টুরা মেরে ফেলল। আমি এর বিচার চাই।’

চরকেওয়ার ইউপির চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, ফকির, ঢালী, দেওয়ান—এ পক্ষ তিনটি সবাই আওয়ামী লীগের। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফকির ও ঢালী বংশের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস–মীমাংসা করা হয়। কয়েক দিন ধরে জমি থেকে আলু হিমাগারে নেওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিবাদ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে পক্ষ দুটি সংঘর্ষে জড়ায়। আজ ভোরে মন্টুর পক্ষের লোকজনের হামলায় জুয়েল নিহত যান। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মন্টু দেওয়ান বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি কোনোভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনিও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। ঢালী বংশের সঙ্গে ফকির বংশের দ্বন্দ্ব রয়েছে। হারুন ফকিররা ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে এখন প্রতিপক্ষের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়। মূলত আলু তোলাকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে গতকাল সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কোনো বিস্ফোরণের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।