শ্বশুরবাড়িতে জায়গাজমি না থাকায় বিয়ের পর স্বামীসহ বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন এলিজাবেথ মুর্মু। ২০ বছর ধরে থাকছেন সেখানে। ছেলেমেয়ে বড় হলেও তাঁদের নিজস্ব কোনো ঠিকানা ছিল না। এই পরিবারকে একটি আধা পাকা ঘর দিচ্ছে সরকার।
এলিজাবেথ মুর্মু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মরাবস্তা সাঁওতালপল্লিতে তিনি ঘর পাচ্ছেন। তাঁর মতো সমতলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাড়ে তিন হাজার দরিদ্র ও অভাবী পরিবারকে একটি করে আধা পাকা ঘর করে দিচ্ছে সরকার। সুবিধাভোগীর তালিকায় কিছু দলিত পরিবারও রয়েছে।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ‘সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন’ নামে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরই মধ্যে অনেকে নতুন ঘরে উঠেছেন। অন্যরা মুজিব বর্ষের মধ্যেই নতুন ঘরে উঠতে পারবেন। যাঁদের জমি নেই, তাঁদের এই প্রকল্পের আওতায় দুই শতাংশ করে জমিসহ ঘর দিচ্ছে সরকার।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এসব অসহায় পরিবারের পুরুষ ও নারীদের আত্মনির্ভরশীল করতে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হবে। স্কুলগামী সব শিশুকে দেওয়া হবে শিক্ষা উপকরণ। ইতিমধ্যে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চার হাজার পড়ুয়া মেয়েকে বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, পাহাড় বা সমতল—কোথাও যাতে কোনো জনগোষ্ঠী পিছিয়ে না থাকে, সে জন্য আলাদাভাবে পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাড়ে চার হাজার দুস্থ-অসহায় পরিবারকে ইতিমধ্যে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাড়ে তিন হাজার পরিবার ঘর পাচ্ছে। এই পুনর্বাসন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
যাঁরা ঘর পেয়েছেন, তাঁদের একজন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মদন রবিদাস। তাঁর দুই শতক জমি আছে। তবে সেখানে ঘর তোলার সামর্থ্য নেই। পরিবারসহ কোনোরকমে টিনের ছাউনির এক ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন। গত শুক্রবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আধা পাকা একটি ঘর নির্মিত হয়েছে। সেটি পেয়ে বেজায় খুশি তাঁর পরিবার।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বড়গোলা গ্রামটি পড়েছে কুর্শা ইউনিয়নে। এই গ্রামে তরণী দাস সম্প্রদায়ের ২৯টি পরিবারের বসবাস। তারা বাঁশ দিয়ে গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে সংসার চালায়। বেশির ভাগের ঘরবাড়ি জরাজীর্ণ। এসব পরিবারকেও সরকার মুজিব বর্ষে পুনর্বাসনের আওতায় এনেছে। তারাগঞ্জের ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, তরণী দাস সম্প্রদায়ের ২৫টি পরিবারকে ঘর দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে পাঁচটি টিউবওয়েল ও পাঁচটি শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে উপবৃত্তিও চালু হবে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের মরাবস্তা পুকুরের চারপাশে বাস করে অর্ধশতাধিক সাঁওতাল পরিবার। তারা ভূমিহীন। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালায়। গত রোববার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পুকুরপাড়ের চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে সারি সারি নতুন ঘর। বেশির ভাগ ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন। ঘরগুলোতে আশ্রয় পাবে ৫০টি ভূমিহীন সাঁওতাল পরিবার।
৩০ বছর ধরে মরাবস্তা পুকুরপাড়ে বাস করেন গ্যাব্রিয়েল হেমব্রম। তিনি বলেন, একসময় এই জায়গায় অনেক জঙ্গল ছিল। তাঁরা পরিষ্কার করে আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই ভূমিহীন। মাটির ঘরে থাকেন। মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে জমি ও ঘর পেয়ে সবাই খুশি হয়েছেন।
গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, এই উপজেলায় আপাতত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ৭০টি দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। আরও যাঁরা ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে তাঁদের তালিকা করে পর্যায়ক্রমে ঘর দেওয়া হবে।