ময়মনসিংহে করোনা পরিস্থিতি
মৃতদের ৬৩ শতাংশই ময়মনসিংহের
আগস্টের প্রথম ১০ দিনে ময়মনসিংহ জেলায় করোনা ও উপসর্গে ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১১৩ জন, অর্থাৎ ৬৩ শতাংশ ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে ৫৭ জন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বাসিন্দা। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এ হাসপাতালে।
হাসপাতালটিতে ময়মনসিংহ ছাড়াও জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর করোনা রোগীরা এসে ভর্তি হচ্ছেন।
করোনায় এত রোগীর মৃত্যু যে উপজেলায়, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিধিনিষেধ ও প্রশাসনের উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চলাচলের বিধিনিষেধ যেহেতু শিথিল করা হয়েছে, তাই করোনার বিস্তার রোধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন মাঠপর্যায়ে তৎপর রয়েছে।
রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘সিট খালি নেই’ ও ‘আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই’ লেখাসংবলিত ব্যানার টানিয়ে রেখেছে। তারপরও ৪০০ শয্যার করোনা ইউনিটে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৪২৪ রোগী ভর্তি ছিলেন। গত ১০ দিনে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং ১০২ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ১০৩ জন পুরুষ ও ৭৬ জন নারী।
জরুরি বিভাগের সামনে ওয়ান–স্টপ ফ্লু কর্ণার চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ ও সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তবেই তাঁকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হচ্ছে। পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমেও সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত ১০ দিনে ওয়ান–স্টপ ফ্লু কর্ণারে ৩ হাজার ৮১ জন এবং ৩০৮ জন টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক জাকিউল ইসলাম।
গত ১০ দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই ময়মনসিংহ জেলার। এ জেলায় করোনা ও উপসর্গে ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। ১১৩ জনের মধ্যে শুধু ময়মনসিংহ সদর উপজেলারই ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
* আগস্টের প্রথম ১০ দিনে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। * আশপাশের নয়টি জেলা থেকে করোনা রোগী আসেন ময়মনসিংহ মেডিকেলে। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। * মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১৩ জন ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৫৭ রোগী মারা গেছেন।
যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই করোনা কিংবা উপসর্গ ছাড়াও কিডনি, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা ছিল বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।
গত ১০ দিনে জামালপুরের ১২, শেরপুরের ৪ ও নেত্রকোনার ৩২ জন মারা গেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেলের করোনা ইউনিটে। বাকি যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের ১৮ জন টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী ও সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীর চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি অক্সিজেন–সংকট তৈরির আশঙ্কা করছেন বিএমএ জেলা সভাপতি মতিউর রহমান ভূঁইয়া। এই সংকট দূর করতে তিনি অবিলম্বে আরও একটি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা চালু করা এবং জনবলসংকট মোকাবিলায় অতিরিক্ত চিকিৎসক ও সেবিকা পদায়নের দাবি জানিয়েছেন।
করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন মহিউদ্দিন খান জানান, আইসিইউ–সংকট দূর করতে ২২ শয্যার আইসিইউর পাশাপাশি আরও ২৪টি আইসিইউ সমমানের শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে, যেগুলোতে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অ্যান্টিগুয়ালেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল, স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম বলেন, বিভাগীয় শহরে সাড়ে আট লাখ মানুষের বাস। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় মহানগর এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার বেশি। করোনা প্রতিরোধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক সচেতনতাবোধ বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
জেলায় ও ময়মনসিংহ মহানগরীতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্টভাবে জেলা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়শা হক প্রথম আলোকে বলেন, যুব অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, শিক্ষা কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের এলাকা ভাগ করে তদারক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ইউনিয়ন পর্যায়ে উপজেলা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।