মেলান্দহে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের সম্মেলন

সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে আয়েজিত এ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। আজ দুপুরে উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

করোনা বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকালে মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ১৩ জানুয়ারি থেকে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে সরকারি ওই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে আজ সকাল ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে সম্মেলন শুরু হয়। সকাল থেকেই মিছিল ও বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পৌর শহর ও ১১টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের শত শত নেতা–কর্মী ও সমর্থক ওই মাঠে আসতে শুরু করেন। বেলা ১১টার মধ্যেই পুরো মাঠ আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীতে ভরে যায়।

বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মুখে মাস্ক ছিল না। জনাকীর্ণ মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারেও কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জিন্নাহ। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে প্রথম অধিবেশন শেষ হয়। এরপরই দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মুখে মাস্ক ছিল না। জনাকীর্ণ মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারেও কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী, জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সাংসদ মোজাফফর হোসেন, জামালপুর-শেরপুর জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ বেগম হোসনে আরা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।

বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি সম্মেলনে আছি। পরে কথা বলব।’ এরপর তিনি কল কেটে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মিছিল নিয়ে নেতা–কর্মীরা সম্মেলনে যোগ দিতে থাকেন। সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকে উপজেলার কোনো যানবাহন উপজেলার পৌর এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। জরুরি প্রয়োজনে লোকজনকে হেঁটে পৌর এলাকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন লোকজন।

সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের বিষয়ে জামালপুরের সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসকের মহোদয়ের কাছে সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নসংক্রান্ত চিঠি এসেছে। জেলা প্রশাসক করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হওয়ায় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

সম্মেলনে আসা অধিংকাংশ নেতা–কর্মীদের মুখে মাস্ক ছিল না
ছবি: প্রথম আলো

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সম্মেলনের বিষয় আমাদের অফিশিয়ালি জানানো হয়নি। তাঁদের হয়তো দলীয় অনুষ্ঠান। ফলে বিষয়টি আমাদের নলেজে নেই। সেখানে কী ধরনের লোকসমাগম হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই।’

সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্ত ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তার মধ্যে সদরে ৪ জন, মাদারগঞ্জে ২, মেলান্দহে ১, দেওয়ানগঞ্জে ২ ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় ৫ জন। এ ছাড়া গত ৭ দিন—১ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ৫৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১৩৮ জন। ওই ৭ দিনের নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্ত ২৫ শতাংশ। গত ৭ দিনে মেলান্দহ উপজেলায় ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।