জনসংখ্যার অনুপাতে সিলেট নগরে ২৭টি ওয়ার্ডে একটি করে উন্মুক্ত খেলার মাঠ থাকার কথা। কিন্তু জেলা স্টেডিয়াম ছাড়া নগরে মাঠ আছে মাত্র ১৬টি। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রাচীরে বেষ্টিত ১৩টি। বাকি তিনটি মাঠ উন্মুক্ত থাকলেও সেখানে খেলা নয়, ব্যবহার হচ্ছে মেলা ও পশুর হাটের কাজে।
মাঠ তিনটি হচ্ছে—নগরের শাহি ঈদগাহ এলাকার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, খাসদবির-গোয়াইপাড়া এলাকার কালাপাথর ও শাহজালাল উপশহর মাঠ। মেলা ও হাটের চক্করে পড়ে মাঠগুলোর চেহারা বদলে গেছে।
জনসংখ্যার অনুপাতে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মাঠ থাকা জরুরি বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, নতুন মাঠ করার প্রয়োজন আছে। নগরের দক্ষিণ সুরমা ও টিলাগড় এলাকায় আরও তিনটি খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনটি মাঠের অবস্থান সিলেট নগরের উত্তর-পূর্ব দিকে। এর মধ্যে শাহি ঈদগাহ মাঠটি সবচেয়ে পুরোনো। মোগল আমলে ঐতিহ্যবাহী শাহি ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর রাস্তার বিপরীত দিকের প্রায় আড়াই শ শতক জায়গাজুড়ে মাঠটি। চা-বাগানের টিলা প্রকৃতির মাঠটি ২০১৮ সালে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে রূপান্তর করা হয়। রূপান্তরের বছরই কোরবানির পশুর হাট বসেছিল। এরপর থেকে বছর বছর শুধু বাণিজ্য মেলা হয়েছে। সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির আগে ঘটা করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করেছিল সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। ২০২০ সালের ৭ মার্চ ওই মেলার উদ্বোধন করার দুই সপ্তাহের মাথায় স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে মেলার স্থাপনাগুলো পড়ে আছে।
সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের ঠিক মাঝখানে বাণিজ্য মেলার রাইড ছিল। কৃত্রিম জলাধার করতে পুকুর আকৃতির গর্ত ও চারদিকে রয়েছে পাকা দেয়াল। স্টল নির্মাণসামগ্রীর পরিত্যক্ত স্থাপনা-বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ও স্তূপ করে রাখা। মাঠের কাঠামো নষ্ট হওয়ায় সেখানে খেলতে আসা কিশোর-তরুণেরা পাশের কালাপাথর মাঠটি ব্যবহার করছেন।
শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে মেলার আয়োজক সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল জব্বার জলিল মাঠের এ চিত্র জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাঠটি যে এ রকম ফেলে রাখা হয়েছে, সেটি কেউ জানায়নি। মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ কাজগুলো করেছিল। তাদের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেবেন।
প্রায় আট একর জায়গায় কালাপাথর মাঠটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের পেছনে দলদলি চা-বাগান লাগোয়া। পাউবোর রেস্টহাউস প্রস্তাবিত পুরো জায়গাটি ১৯৬৪ সালে অধিগ্রহণ করা হলেও পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ফাঁকা পেয়ে সেটি অঘোষিতভাবে খেলার মাঠ হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন মাঠটিকে খাস খতিয়ানভুক্ত করে নতুন খেলার মাঠের প্রস্তাব করেছে।
গত সোমবার বিকেলে কালাপাথর মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নগরের বিভিন্ন মহল্লার কিশোর-তরুণেরা খেলাধুলা করছেন। তবে দখলচেষ্টায় উদ্বেগ রয়েছে ক্রীড়ামোদী স্থানীয় লোকজনের মধ্যে।
কালাপাথর মাঠে পশুর হাট এবং এরপর নতুন দখল তৎপরতা প্রসঙ্গে সিটির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে সেখানে হাট বসানো হয়েছিল। মাঠটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। হাটের পর সেখানে কোনো দখলচেষ্টা থাকলে সেটি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
শাহজালাল উপশহরের খেলার মাঠটি গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রীতিমতো বন্দী অবস্থায় আছে। প্রায় দুই একর আয়তনের মাঠটি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীন। কর্তৃপক্ষ বলেছে, খেলার মাঠটি যখন শুধু খেলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল, ঠিক তখনই ‘তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা’ (গ্রাসরুট্স) নামের একটি সংগঠনকে বাণিজ্য মেলা করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
মেলার আয়োজক তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটির প্রধান নির্বাহী হিমাংশু মিত্র বলেন, মাঠে মেলার অনুমতি তাঁরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনেছিলেন। মেলার শুরুতে চাঁদাবাজির ঘটনার পর মামলার ‘আলামত’ হিসেবে স্থাপনাগুলো ওইভাবে রাখা হয়েছে।
মাঠগুলোর দুরবস্থা প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেলার আয়োজকদের শর্ত সাপেক্ষে মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধান শর্ত মাঠের কোনো ক্ষতি না করা। ক্ষতি করলে অবিকল অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। এ অবস্থা থাকলে সেটি মানা হবে না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।