মেয়রকে কাদায় নামানোর চেষ্টার পর সড়ক সংস্কারের আশ্বাস

সড়ক সংস্কারের দাবিতে চারঘাট–বাঘা মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। শনিবার দুপুরে রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভার সারদা ট্রাফিক মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার প্রধান সড়কের ধারে একটি কলেজ ও দুটি বিদ্যালয়। বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে হাঁটুসমান পানি জমে কাদা হয়। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ট্রাক পদ্মা নদীতে বালু নিতে যায়। এতেই সড়কটি আরও বেহাল হয়ে পড়ে।

সড়কটি সংস্কারের দাবিতে আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত এলাকাবাসী চারঘাট-বাঘা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় মেয়র অবরোধস্থলে এলে লোকজন তাঁকে টেনে কাদাপানিতে নামানোর চেষ্টা করেন।

চারঘাট পৌরসভার মেয়র এসে তাঁদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার পর তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এ সময় তাঁরা মেয়রকে কাদাপানিতে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে সাধারণের দাবির মুখে মেয়র সড়কটি মেরামতের আশ্বাস দেন।

রাজশাহীর চারঘাট পৌর এলাকার সরদহ ট্রাফিক মোড় থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের এই সড়কটি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার প্রধান রাস্তা। এই সড়কের পাশেই রয়েছে সরদহ মহিলা কলেজ, মুক্তারপুর উচ্চবিদ্যালয় ও মুক্তারপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। এই সড়ক বেহাল হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়েছে।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, সড়ক বেহাল হওয়ার কারণে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে এ সড়কটি সারদা ট্রাফিক মোড়ে এসে বাঘা-চারঘাট মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে বেশ কটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ জন্য সারাক্ষণ এখানে মানুষের উপস্থিতি থাকে। ভাঙা রাস্তা থেকে বালুর ট্রাক মহাসড়কে ওঠার সময় কাদা নিয়ে আসতে আসতে ট্রাফিক মোড়েও একই রকম কাদা হচ্ছে।

কাউন্সিলর জনগণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার জন্য মেয়রকে পানিতে নামার অনুরোধ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মেয়রকে হাত ধরে কাদাপানিতে নামানোর চেষ্টা করেন।

আজ চারঘাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে স্থানীয় সারদা ট্রাফিক মোড়ের ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সড়কের মাঝবরাবর বাঁশ দিয়ে অবরোধ করে রাখেন। তারা রাস্তার মাঝখানে চেয়ার পেতে বসেন। অনেকেই কাদাপানির মধ্যে দাঁড়িয়ে যানবাহন ঠেকাতে থাকেন। এতে রাস্তার দুই পাশে শত শত যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। একইভাবে পদ্মা নদীতে বালু নিতে আসা ট্রাকগুলো আটকা পড়ে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হক আসেন। এ সময় কাউন্সিলর নাজমুল হাসান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কাদাপানিতে নেমে দাবির পক্ষে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিরা দুই বছর ধরে সড়ক নিয়ে ভুগছেন। সড়কের পাশে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতি বর্ষায় সড়কটি কাদাপানিতে ভরে যায়। শিক্ষার্থীরা স্কুল–কলেজে যেতে পারে না। এলাকাবাসীও দুর্ভোগের শিকার হন। এই সড়কের ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। কোনো সমাধান করেননি।

নাজমুল হাসান বলেন, আজ তাঁদের এখানে চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হক দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য এসেছেন। এরপর কাউন্সিলর জনগণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার জন্য মেয়রকে পানিতে নামার অনুরোধ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মেয়রকে হাত ধরে কাদাপানিতে নামানোর চেষ্টা করেন। মেয়র কাদায় না নেমে কাউন্সিলরের হাত থেকে মাইক নিয়ে দাবির সমর্থনে বক্তব্য দেন।

মেয়র একরামুল হক বলেন, এই সড়ক সংস্কারের জন্য তিনি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বলেছেন। আসলে ১০ চাকার ট্রাকের কারণে রাস্তা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তিনি এলাকাবাসীকে আশ্বাস দেন যে এক সপ্তাহের মধ্যে এই রাস্তার কাজ শুরু হবে। পরে তিনি অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ জানান।

মেয়র বলেন, এই অবরোধের কারণে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। সড়ক সংস্কার হবে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা করতালি দিয়ে মেয়রকে অভিনন্দন জানান। এরপর বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।

সড়কটির ব্যাপারে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে রাস্তাটির মুক্তারপুর বাজার থেকে মুক্তারপুর উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত সংস্কারের দরপত্র হয়েছিল। ছয় মাস আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়। তখন এই সড়কে এক সপ্তাহের জন্য বালুর ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু কেউ তাঁদের কথা শোনেননি। ফলে সড়কটি আবার নষ্ট হয়ে যায়।

নূরুল ইসলাম বলেন, সরদহ ট্রাফিক মোড় থেকে ৫০ মিটার রাস্তার কাজ বাকি আছে। সেটি এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে।

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বালুর ব্যবসার সঙ্গে এই এলাকার দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে। বালুর ট্রাক যাবে। সেভাবেই রাস্তা সংস্কার করতে হবে।