ময়মনসিংহে বোরো সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ ভাগই পূরণ হয়নি

সরকারিভাবে ধান ও চাল কেনার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, এ বছর বাজারমূল্য তার চেয়ে বেশি ছিল।

বোরো ধানের খেত
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ময়মনসিংহে এ বছর সরকারিভাবে বোরো ধান, সেদ্ধ ও আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি সেদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ করা হলেও ধানের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা যায়নি।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ সংগ্রহ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। খাদ্য বিভাগের দাবি, সরকারিভাবে ধান ও চাল কেনার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, এ বছর বাজারমূল্য তার চেয়ে বেশি। যে কারণে কৃষকেরা ধান ও চাল বাজারে বিক্রি করেছেন।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর সরকারিভাবে নির্ধারণ করা দাম ও বাজারমূল্য ছিল কাছাকাছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাজারমূল্য ছিল বেশি। সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। আবার ধানের আর্দ্রতা কম হলে কিনতে চায় না। এতে ধান বিক্রি হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এসব কারণে কৃষকেরা বাজারে বিক্রি করেছেন। এ বছর বাজারে কিছুটা ভেজা ধানের দামও সরকারের দামের চেয়ে বেশি ছিল।

কৃষক সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রি করতে বাধ্য নন। সরকারের দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়া খুবই ইতিবাচক দিক।
জহিরুল ইসলাম, জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা

ময়মনসিংহ জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৫ মে থেকে শুরু হয় সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি। প্রথম দফায় ৩১ আগস্ট সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এ কর্মসূচিতে ছিল বোরো ধান, সেদ্ধ ও আতপ চাল কেনা। প্রতি কেজি ধান ২৬, সেদ্ধ চাল ৩৬ ও আতপ চাল ৩৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে সরকার।

জেলার ১৩টি উপজেলার ১৯টি খাদ্যগুদামে ৬২ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে সংগৃহীত হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৩০ দশমিক ২৫০ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৪ শতাংশ। আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ বা ৪ হাজার ৫৮০ দশমিক ২২ মেট্রিক টন। তবে ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ শতাংশের বেশিই পূরণ হয়নি। ৪৩ হাজার ৭৭৩ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫৮৬ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন।

গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ গুদামে ৬৮০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেখানে কেনা হয়েছে মাত্র ১ মেট্রিক টন। অথচ ওই এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইশরাত আহমেদ বলেন, ‘আমরা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাজারে দাম বেশি থাকায় কৃষক আমাদের ধান দেননি।’

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, কৃষক সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রি করতে বাধ্য নন। সরকারের দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়া খুবই ইতিবাচক দিক। সরকার ধান কেনায় বাজারে দাম বেড়েছে। এতে কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন।