যন্ত্র বসলেও মেলে না পূর্বাভাস

এক কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছর আগে বসানো হয় একটি করে ‘রেইন গজ মিটার’। প্রায় সব অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

মাদারীপুর জেলার মানচিত্র

কৃষি আবহাওয়ার আগাম তথ্য দেখানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের বারান্দায় একটি বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। অথচ সেখানে কোনো তথ্যই নেই। যে যন্ত্রের মাধ্যমে এ বোর্ডে তথ্য হালনাগাদ হয়, সেটি থাকার কথা ভবনের ছাদে, কিন্তু সেখানে ওই যন্ত্রটিও নেই।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। কৃষকদের আগাম আবহাওয়ার তথ্য দেওয়ার জন্য জেলার ৫৬টি ইউনিয়নে এক কোটির বেশি টাকা খরচ করে ‘রেইন গজ মিটার’ নামের যন্ত্র বসানো হয়। দুই বছর আগে যন্ত্রগুলো বসানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো তথ্যই পাননি কৃষকেরা। বেশির ভাগ যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

আলীনগর ইউনিয়নের কৃষক গণেশ সরকার বলেন, ‘আমরা যদি তিন দিন আগেই জানতে পারতাম কুয়াশা পড়বে নাকি বৃষ্টি হবে অথবা বেশি গরম। তাহলে আমরা সেই হিসাব করে ফসলাদি চাষবাস ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারতাম।’

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেইন গজ মিটার লাগানোর প্রথম কয়েক দিন কাজ করলেও এখন নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ইউপি কার্যালয়ে স্থাপিত আবহাওয়া বোর্ডে তথ্য লিপিবদ্ধ হচ্ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয় থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘কৃষি আবহাওয়ার তথ্য পদ্ধতির উন্নতিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলার ৬০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য রেইন গজ মিটার ও এর যন্ত্রাংশ বসানো হয়। এতে ব্যায় হয় ১ কোটি ৬৪ হাজার টাকা। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, ঝড়ের পূর্বাভাসসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা কৃষকদের মধ্যে প্রকাশের জন্য যন্ত্রটিতে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। কৃষকদের মুঠোফোনেও এসব তথ্য পৌঁছে যাওয়ার কথা। রেইন গজ মিটার দেখাশোনার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সদর ও কালকিনি উপজেলার ১০টি ইউপি কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, রেইন গজ মিটারগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। তথ্য বোর্ডেও কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। কৃষকেরা আবহাওয়ার বিষয়ে কোনো সুফল সেখান থেকে পাচ্ছেন না।

সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের এ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যন্ত্রটি বসানো হয় ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল বারীর ঘরের ছাদে। শুরুতে চালু থাকলেও অযত্ন আর অবহেলায় সেটি এখন নষ্ট।

আবদুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি ভবন না থাকায় বাড়িতে যন্ত্রটি বসানো হয়। সরকারের এ উদ্যোগ খুবই ভালো ছিল। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও কৃষকেরা তথ্য পেতেন। তবে অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আর ঠিক করা হয়নি।

আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাহিদ পারভেজ বলেন, তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। রেইন গজ মিটারটি কীভাবে হারাল, তিনি জানেন না। সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমানে পলাতক বলে জানা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সব কটি রেইন গজ মিটার নষ্ট হয়নি। কিছু এখনো সচল আছে। সেগুলো থেকে কৃষক সুফলও পাচ্ছে। নতুন বরাদ্দ আসলে যন্ত্রপাতিগুলো সংস্কার করে ব্যবহার হলে কৃষকেরা আরও বেশি সুবিধা পাবেন। তবে জেলার কোন এলাকার কৃষকেরা আবহাওয়ার আগাম তথ্য পাচ্ছেন, তা তাৎক্ষণিক তিনি জানাতে পারেননি।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। বর্ধিত মেয়াদে আরও ৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।