যশোরে পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সম্পদ বিবরণী গণমাধ্যমে প্রকাশ
দুর্নীতি প্রতিরোধে যশোরের পাঁচ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সম্পদ বিবরণী গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার আগে ও মেয়াদের পাঁচ বছর পূর্ণ করার পরে তাঁরা নিজেদের সম্পদের তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের একটি আবাসিক হোটেলের মিলনায়তনে পাঁচজন জনপ্রতিনিধি লিখিত আকারে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণী গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ভোজগাতি ইউপির আবদুর রাজ্জাক, কেশবপুর উপজেলার সদর ইউপির আলাউদ্দীন, বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলার সবদুল হোসেন খান, অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগের মফিজ উদ্দীন ও শার্শা উপজেলার বেনাপোলের বজলুর রহমান।
বেনাপোল ইউপির চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের ব্যক্তিগত ও নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ১৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বার্ষিক আয় প্রায় ৫ গুণ বেড়ে ৮৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা হয়েছে।
জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঁচ বছর আগে ভোজগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের ব্যক্তিগত ও নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। এখন সেই আয় হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে দেড় শতক জমি এখন বেড়ে ৩০ শতক হয়েছে।
এদিকে কেশবপুর সদর ইউপির চেয়ারম্যান আলাউদ্দীনের ব্যক্তিগত ও নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখন সেটি কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ২২ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ তিন বিঘা থেকে বেড়ে আট বিঘা জমি হয়েছে।
বন্দবিলার ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খানের ব্যক্তিগত ও নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২২ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ লাখ টাকা হয়েছে। তিনি এখন ১৫ একর জমির মালিক। এ ছাড়া ২০ ভরি সোনা রয়েছে।
প্রেমবাগ ইউপির চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীনের ব্যক্তিগত ও নির্ভরশীলদের আয় ১৩ লাখ ২১ হাজার ৪০৮ টাকা ছিল। এখন সেটি হয়েছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর ২ একর ১৮ শতক জমি ও ৪ লাখ টাকার একটি জিপ গাড়ি রয়েছে।
এদিকে বেনাপোল ইউপির চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের ব্যক্তিগত ও নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ১৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বার্ষিক আয় প্রায় ৫ গুণ বেড়ে ৮৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ৯ বিঘা জমি ও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ওষুধের দোকান ও সিমেন্ট রয়েছে।
ভোজগাতি ইউপির আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করছি। যে কারণে এবার দিয়ে টানা তিন মেয়াদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছি। ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে এবারও আমি চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হয়েছি। কিন্তু আমি চেয়ারম্যান হিসেবে তেমন কোনো সম্পদ অর্জন করতে পারিনি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আরও ১০ লাখ টাকা বেশি খরচ হতো। মনোনয়ন কিনতেই ১০ লাখ টাকা চলে গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে কীভাবে!’
দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সম্পদ বিবরণী প্রকাশ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) কামরুল হাসান ভূঁইয়া, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ।
আয়োজকেরা জানান, দুর্নীতি প্রতিরোধে ইউপি চেয়ারম্যানদের ব্যক্তিগত আর্থিক সম্পদের বিরবণী প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যশোরের ৮টি উপজেলার ১০ জন ইউপি চেয়ারম্যান নিয়ে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।