নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ
যাত্রী নিরাপত্তা উপেক্ষিত
লঞ্চযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে নৌপথে দুর্ঘটনায় যাত্রীদের মৃত্যু হচ্ছে।
ঢাকা–বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথগুলোর অধিকাংশ লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেই। লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, বয়াসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জামও অপ্রতুল। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার নৌপথে নৌ ফায়ার স্টেশন আছে মাত্র দুটি। এসব স্টেশনে নৌযান, সরঞ্জাম ও জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এতে লঞ্চযাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
এই লঞ্চযাত্রীদের এই নড়বড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যেই এখন চলছে জাতীয় নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রশিক্ষিত জনবল ও নিরাপদ জলযান, নৌনিরাপত্তায় রাখবে অবদান’। গত শুক্রবার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঢাকায় সদরঘাটে নৌনিরাপত্তা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আরামদায়ক হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ যাত্রীবাহী লঞ্চে চলাচল করেন। লঞ্চমালিকেরা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌপথে লঞ্চ চালিয়ে প্রচুর টাকা আয় করেন। অথচ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা প্রয়োজনীয় ও সঠিক উদ্যোগ নেন না। এ কারণে লঞ্চডুবিসহ ঘটে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। এতে অনেক যাত্রী নিহত ও আহত হন। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সুগন্ধা নদীতে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই রাতে ঢাকা থেকে বরগুনা আসার পথে সুগন্ধা নদীতে অভিযান–১০ নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লেগে ৪৯ জন মারা যায়। এ ছাড়া ৩০ জন নিখোঁজ হন। এরপর লঞ্চে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
যদিও নৌপরিহন অধিদপ্তরের সার্ভে সনদের শর্তে বলা আছে, লঞ্চের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বাস্তবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাত্রী পরিবহনকারী লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র বা ফায়ার ইস্টিংগুইশার নেই। লঞ্চের কর্মীদের জন্য নেই আগুন নেভানোর কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। লাইফবোট থাকার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চের ছাদে তা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চের মালিক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর লঞ্চগুলোকে সার্ভে সনদ নিতে হয়। এসব সরঞ্জাম না থাকলে সনদ দেওয়া হয় না। তবে কিছু কিছু লঞ্চে এ ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকতে পারে।
এমভি অভিযান–১০ লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ছিল না। ফলে লঞ্চটির শ্রমিক-কর্মচারীরা আগুন নেভানোর কোনো চেষ্টা না করেই লঞ্চ থেকে সটকে পড়েন। আগুন নেভানোর জন্য তাঁদের ছিল না কোনো প্রশিক্ষণও। ওই লঞ্চে এত বড় অগ্নিদুর্ঘটনার পরও দক্ষিণাঞ্চলগামী অধিকাংশ লঞ্চে এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ উদ্যোগে নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-বরগুনা নৌপথে এমভি ফারহান-৮, শাহরুখ-২, পূবালী-১, রাজহংস-৮, এমভি অভিযান-১০ সহ ছয়টি লঞ্চ চলাচল করে। আমতলী-ঢাকা নৌপথে চলে সুন্দরবন-৭, ইয়াদ-১ ও তরঙ্গ-৭। ৪০০-এর ওপরে ধারণক্ষমতার এই ৯ লঞ্চের কোনোটিতেই নেই শর্ত অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম। একইভাবে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো বিলাসবহুল হলেও এসব লঞ্চেও রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের ঘাটতি। এসব লঞ্চের ধারণক্ষমতা ৮০০-এর ওপর।
ঢাকা-বরগুনা পথে চলাচলকারী এমভি শাহরুখ-২ ও ফারহান-৮ লঞ্চে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এমভি ফারহানে ১৮টি বালতি এবং ইঞ্জিনকক্ষ, কেবিনের করিডর ও মাস্টার কক্ষে বিই শ্রেণির ১৩টি অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র আছে। তবে এমভি শাহরুখ-২ লঞ্চটিতে ১৮টি বালতি এবং ইঞ্জিনকক্ষ ও ক্যানটিনে পাঁচটি অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র দেখা গেলেও অন্যান্য স্থানে কোনো অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম নেই। তবে দুটি লঞ্চেই পাম্প আছে। লঞ্চটির পরিদর্শক এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের সবকিছুই পরিপূর্ণভাবে আছে। কোনো ঘাটতি নেই।’