রংপুরে নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশা, শহরের রাস্তায় যানজট

সড়কজুড়ে অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলে জানজট এখন নগরবাসীর নিত্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ সকালে সিটি বাজার এলাকায়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুর শহরের রাস্তাগুলো এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার দখলে। অটোরিকশা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ না থাকা ও অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল করায় শহরে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

শহরের সিটি বাজারের সামনে থেকে সুপারমার্কেটের মোড় হয়ে পায়রা চত্বর ও জাহাজ কোম্পানির মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের আশপাশে বিপণিবিতান, বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ অফিস অবস্থিত। অটোরিকশার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

সিটি করপোরেশনের ভাষ্য অনুযায়ী, শহরে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ৭ থেকে ৮ হাজার চার্জার রিকশা চলাচল করছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো সড়ক রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঠাসা। থেমে থেমে অটোরিকশার জটলা তৈরি হচ্ছে। যাত্রী দেখলেই চার্জার রিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আবার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর আশায় অটোরিকশাগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে মুহূর্তেই অটো ও চার্জার রিকশার দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। এই দীর্ঘ সারির কারণে পথচারীদের সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়াও বেশ কষ্টকর। এদিকে কাল শুক্রবার সাপ্তাহিক দোকানপাট বন্ধ থাকবে বলে আজ সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষের যাতায়াত বেশি দেখা গেছে।

বাজার শেষ করে রাস্তার উল্টো দিকে যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন শহরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজার করতে যত সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় রাস্তায় চলে যায়। রাস্তা পার হতেও অনেক সময় লাগে।

অটোরিকশার দীর্ঘ সারির কারণে পথচারীদের সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়াও বেশ কষ্টকর
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে পায়রা চত্বরের পাশে সড়কের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পায়রা চত্বর থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ, অটোরিকশায় গেলে সময় লাগছে আধঘণ্টা।

অটোরিকশাচালক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘এত দিন বিধিনিষেধ গেল। এখন আবার রাস্তায় জ্যামে (যানজট) আটকে থাকতে হয়। এ জ্যামের (যানজট) কারণে আয়রোজগারও কমে গেছে।’

শহরের জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকায় চারদিক থেকে চারটি সড়ক এসে মিলেছে। এ মোড়ের চারদিকেই বিপণিবিতান অবস্থিত। এখানেও সড়কের মধ্যে অটোরিকশার স্ট্যান্ড দেখা যায়। এই মোড়ের পাশে শহরের প্রধান ব্যবসায়ীকেন্দ্র হাঁড়িপট্টি, লোহাপট্টি ও বেতপট্টি। এই এলাকার ছোট সংযোগ সড়কগুলোয় কেনাকাটা করতে এসে দীর্ঘ সময় মানুষকে যানজটে আটকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এ সময় এক নারী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘বছরের পর বছর এ অবস্থা দেখে আসছি। এ বিষয়ের কি কোনো সমাধান নেই?’

পায়রা চত্বর থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ, অটোরিকশায় গেলে সময় লাগছে আধঘণ্টা

সিটি করপোরেশনের ভাষ্য অনুযায়ী, শহরে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ৭ থেকে ৮ হাজার চার্জার রিকশা চলাচল করছে। সব রাস্তায় এসব যান চলাচল করার কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে মহানগর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এত অটোরিকশা যে এগুলো সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়।

সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শহর এলাকা যানজটমুক্ত রাখতে অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু থেমে থেমে আবার একই ঘটনা ঘটছে। তবে তিনি মনে করেন, নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন চলাচল করার কারণে এমনটি হচ্ছে। এরপর আবার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে যেন যানজটের কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়।