রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ এসেছেন ছেলের হাত ধরে, কেউ নাতনির সঙ্গে কেউবা এসেছেন হুইলচেয়ারে। অসুস্থ শরীর নিয়েও এসেছেন কেউ কেউ। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আজ হয়ে গেল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা।
মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রংপুর জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর কমিটি যৌথভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এ উপলক্ষে জিলা স্কুলের প্রধান ফটক পেরিয়ে একটি বিশাল মাঠের পাকুড়গাছের নিচে সবুজ ও লাল রঙের মঞ্চ ও সামিয়ানা টাঙানো হয়। অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই সেখানে সমবেত হতে থাকেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেয় একটি করে জাতীয় পতাকা। মঞ্চ থেকে বাজানো হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান। ৮০০ বীর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন প্রমুখ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধার পতাকা উত্তোলন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি ও জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। উদ্বোধনের পরপর কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান ও দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হয়। দেশাত্ববোধক গানের সঙ্গে সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে চোখ বেঁধে হাড়িভাঙা খেলা এবং নিজের বেলুন রক্ষা করে অন্যের বেলুন ফুটিয়ে ফেলার খেলাও বেশ জমে উঠেছিল।
স্কুলশিক্ষার্থী নাতনির হাত ধরে অসুস্থ শরীর নিয়ে মিলনমেলায় আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক। এ সময় মঞ্চের পেছনে তাঁকে নাস্তা খাইয়ে দেন ছেলে নূরুল আমিন। আধো আধো গলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘এমন একটি অনুষ্ঠানে না আসলে কি ভালো লাগে? যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। তাঁদের সঙ্গে দেখা হলো। মনটা ভরে গেল। চোখে পানি এল।’
বেলা দুইটায় আলোচনা করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি টিপু মুনশি বলেন, ‘আমি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম যে রংপুরে এমন একটি আয়োজন হবে, সেখানে আমি উপস্থিত থাকব। তাই আমি আজ সকালে ঢাকা থেকে রংপুরে ছুটে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘অসংখ্য শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তে এবং অসংখ্য মা–বোনের ইজ্জতে এই দেশ পেয়েছি আমরা। ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়ে আবার নতুন করে এসব কথা বলতে হচ্ছে। কারণ, দেশে ষড়যন্ত্র চলছে।’
দুপুরের পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাঠের আরেকপাশে একই সামিয়ানার নিচে পাশাপাশি একসঙ্গে বসে দুপুরের খাবার খান।