রংপুরে শতাধিক গুদাম বন্ধ, কেনায় নেই আগ্রহ

ঈদে চামড়া কেনাবেচায় কর্মচাঞ্চল্য নেই। ১২ থেকে ১৪ জন ফড়িয়া ও হাতেগোনা ৪-৫ জন ব্যবসায়ী চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

রংপুর জেলার মানচিত্র

দুই-তিন বছর আগেও ঈদুল আজহার আগমুহূর্তে রংপুর নগরের হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাতেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবারের ঈদে সে চামড়াপট্টি সুনসান। শতাধিক গুদামই বন্ধ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় তাঁরা এই ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, একশ্রেণির ট্যানারিমালিকের কাছে জিম্মি জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। এর আগেও পশুর চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পেরে অনেকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফলে এবার ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচায় তেমন কোনো কর্মচাঞ্চল্য নেই। ১২ থেকে ১৪ জন ফড়িয়া ও হাতেগোনা ৪-৫ জন ব্যবসায়ী চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

সরকার এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দামে চামড়া কেনাবেচা সম্ভব নয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারির মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা তুলতে না পারা ও ঋণ না পেয়ে পুঁজির সংকট। ফলে এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারিভাবে চামড়া কেনাবেচায় নীতিমালা তৈরি, চামড়াশিল্পে ঋণের ব্যবস্থা করাসহ কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে সরকারকে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি তাঁদের।

রংপুর অঞ্চলে চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বড় হাট বসে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীর কালীবাড়ীতে। সপ্তাহে দুদিন, অর্থাৎ শনি ও বুধবার হাটটি বসে। হাজীপাড়া চামড়াপট্টি থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে সেখানে যান। এ ছাড়াও লালমনিরহাটের বড়বাড়ি, চাঁপারহাটে ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচা করেন।

একরামুল হক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ট্যানারির প্রতিনিধিরা চামড়া কিনতে না এলে দাম বাড়ার কোনো সুযোগ থাকে না। মালিকদের নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়। ফলে কম দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকে না।

আগে এ অঞ্চলের হাটগুলোতে রিলায়েন্স, বিএলসি, আর কে লেদার, আজমেরী লেদার, পান্না লেদার, মুক্তা, মুক্তি ট্যানারিসহ বিভিন্ন ট্যানারির প্রতিনিধিরা আসতেন বলে জানান একরামুল। এখন তাঁদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। যাঁরা হাটে আসেন, তাঁদের মধ্যে আবার সিন্ডিকেট থাকে।

রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ খান বলেন, বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই শতাধিক ট্যানারির মধ্যে এখন হাতে গোনা ১৫ থেকে ২০টি চালু আছে। কেউ চামড়া কিনে লোকসানের বোঝা ভারী করতে চাইছেন না। তবে এরপরও কিছু চামড়া কেনা হবে এবারের ঈদে।