রংপুরে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঈদের কেনাকাটা
করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যু। শহরে মাইকিং করে মৃত্যুর কথা জানানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও মানুষ ঈদের কেনাকাটার জন্য বাইরে নামছে। বিপণিবিতান, বাজার ও সড়কে মানুষের ঢল। এতে করোনার সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর শহরের সিটি বাজারের সামনে থেকে সুপার মার্কেট মোড়, পায়রা চত্বর থেকে জাহাজকোম্পানি মোড় হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে শাপলা চত্বর পর্যন্ত মানুষ গিজগিজ করছে। সড়কগুলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে পরিপূর্ণ। ফুটপাতে হকারদের মালামাল। সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
মানুষের ভিড় এত বেশি যে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে নবাবগঞ্জ বাজারে যাবেন, এমন কয়েকজন নারী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে রাস্তা পারই হতে পারছেন না। এঁদের মধ্যে পুরুষেরা ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেলেও নারীরা আটকে যাচ্ছেন। এমন দৃশ্য শহরের অনেক সড়কেই দেখা গেছে।
এ সময় একজন নারী ক্রেতা বললেন, ‘সবার মুখে মুখে করোনার গল্প, কিন্তু শহরে মানুষের ঢলাচল দেখে মনে হয় না দেশে এমন একটা মহামারি চলছে। আমরা মাস্ক পরেছি ঠিকই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্কটুকু দেখা যায় না। এই হচ্ছে আমাদের সচেতনতা।’
ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আতাউর রহমান নামের এক শিক্ষক বলেন, ‘কী আর করব, ঈদ ঘিরে পরিবারে কিছু কেনাকাটা থাকে। তাই বের হওয়া। কিন্তু বাজারে এত মানুষের ভিড় তা বাড়ির বাইরে বের না হলে বোঝা যাবে না। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ভালো। কিন্তু সেটিও অনেকে করেন না।’
রংপুরে করোনা সংক্রমণ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত তিন দিনের ব্যবধানে জেলায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ তিন দিন আগেও এখানে খুব কমসংখ্যক করোনা রোগী ছিল। একই সঙ্গে গত তিন দিনে এ জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
রংপুরে সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার রায় বলছেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষজন খুব একটা মানছে না। এরপরও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গত তিন দিনের ব্যবধানে রংপুরে করোনায় মৃত্যু ও করোনার সংক্রমণ বেড়েছে।’
‘জনতার রংপুর’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার জন্য শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে মাস্ক না পরা মানুষের হাতে মাস্ক তুলে দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
এই সংগঠনের প্রধান চিকিৎসক সৈয়দ মামুনুর রহমান বলেন, ‘রংপুরে এখন প্রতিনিয়ত করোনা রোগী বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন দফায় করোনা ইউনিটে শয্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এমন অবস্থা গত দুই সপ্তাহ আগেও ছিল না। তাই অসহায় করোনা রোগীদের পাশে থাকার জন্য আমরা বিনা মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ ওষুধ সরবরাহ করছি। একই সঙ্গে মানুষকে সচেতন হতে প্রচারণাও চলানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, এবার কোরবানির হাটে অনেক কড়াকড়ি ছিল। শহরে ভ্রাম্যমাণ অদালতের একাধিক দল কাজ করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর চেষ্টা চলানো হচ্ছে। ঈদের জামাতেও এসব নিয়ম মেনে চলার জন্য প্রতিটি মসজিদ কমিটিকে প্রচার চালানোর জন্য বলা হয়েছে।