রাজবাড়ীতে টিকাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

রাজবাড়ীর সদর হাসপাতালে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের ভিড়। সোমবার বেলা ১১টার দিকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো সামাজিক দূরত্ব দেখা যায়নি। বরং সবাই গা ঘেঁষে লাইনে দাঁড়ানোর কারণে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ লাখ ৬ হাজার ২৮৯ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ওই টিকা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ১২ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়। শিক্ষার্থীদের দুটি লাইন করা হয়েছে। বাঁ পাশের লাইনে ছাত্র এবং ডান পাশে ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। মাঝখান দিয়ে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছে। ভিড়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। কারও কারও মুখে মাস্ক নেই। টিকাদান কক্ষের সামনে থেকে শুরু হওয়া লাইন, সার্জারি ওয়ার্ড পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডের সামনে দিয়ে, বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার পার হয়ে, জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে হাসপাতাল ভবনের বাইরে চলে এসেছে। আশপাশে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ঘোরাঘুরি করছেন।

বানিবহ ইউনিয়নের বৃচাত্রা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলে, ‘সকাল ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আমাদের মাদ্রাসা থেকে প্রায় ৩০টি ইজিবাইকে করে আমরা হাসপাতালে এসেছি। প্রচুর ভিড়। স্যাররাও সঙ্গে আছেন। আমি ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করার পর টিকা নিতে পেরেছি। অন্য সহপাঠীদের জন্য অপেক্ষা করছি। সবাই একসঙ্গে বাড়িতে ফিরব।’

একাধিক শিক্ষার্থী বলে, এখানে লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়মের বালাই নেই। কেউ শারীরিক দূরত্ব মানছে না। সবাই গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে। এতে কারও করোনা হয়ে থাকলে অন্যদের মধ্যেও তা সংক্রমিত হবে। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালু। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

রক্ত নিতে আসা সজীব কুমার শিকদার বলেন, ‘আমি থ্যালাসেমিয়া রোগী। প্রতি মাসেই অন্তত একবার আমাকে হাসপাতালে আসতে হয়। আজকেও রক্ত নেওয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু এত ভিড়, তা বলার মতো নয়। আমি ছাড়াও অনেক রোগী ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য বিকল্প স্থানে ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।

হাসপাতালে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনরত রাজবাড়ী সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে আমরা ১০ জন দায়িত্ব পালন করছি। টিকাকেন্দ্রে কিছুক্ষণ পরপর শিক্ষার্থীদের ঢোকানো হচ্ছে। একদল বের হলে আরেক দল পাঠানো হচ্ছে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব। তবে হাসপাতালে অবকাঠামোগত সংকট রয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে টিকা দেওয়া হচ্ছে।’

টিকা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা মাহফুজুল হাসান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী, বেলা দুইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু গতকালও আমরা বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দিয়েছি। সীমিত জনবল নিয়ে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না। এ ছাড়া টিকা দেওয়ার পরও আরও অনেক কার্যক্রম থাকে। এগুলো সম্পন্ন করতে করতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।’

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এস এম শাহাদাত মিরাজ বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী আসছে, তাদের প্রত্যেককে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের চাপ অনেক বেশি। বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি।’