রাজবাড়ী সদরে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেননি নৌকার চার প্রার্থী
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চতুর্থ ধাপে ১৪টি ইউনিয়নের নির্বাচনে ৮টিতে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এর মধ্যে চার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। তাঁরা মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসতে পারেননি। চারজনের একজন চতুর্থ এবং বাকি তিনজন ভোটপ্রাপ্তির দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন।
সুলতানপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছিলেন ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। নৌকা প্রতীক নিয়ে ছয় প্রার্থীর মধ্যে তিনি হয়েছেন চতুর্থ। পেয়েছেন ৯৫৯ ভোট। বিজয়ী প্রার্থী আশিকুর রহমান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৯৪ ভোট।
লুৎফর রহমান বলেন, ‘পরাজয়ের মূল কারণ হলো আমার আপন ভাইব্রাদার ও নেতা-কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেছে। আমার সঙ্গে স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীরা বেইমানি করেছে। তারা খাইছে–দাইছে আমার, ভোট দিচে চশমারে (বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতীক)। সবাই ওপরে ওপরে আমার পক্ষে ছিল, কিন্তু আমাকে ভোট দেয়নি।’
চতুর্থ ধাপে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে একটিতে একক প্রার্থী থাকায় তিনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। বাকি ১৩ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচটিতে বিজয়ী হয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। দুটিতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ছাড়া ছয়টিতে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
খানখানাপুর ইউনিয়নে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে। নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির আলী মোল্লা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩২৭ ভোট।
বসন্তপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন সরদার। বিএনপির সাবেক এ নেতা চেয়ারম্যান থাকার সময় আওয়ামী লীগে যোগ দেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে বিগত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। এবার পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৫০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মীর্জা বদিউজ্জামান। তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৭৫ ভোট। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত আবদুল মান্নান মিয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৭৭ ভোট।
রামকান্তপুর ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। ৪ প্রার্থীর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিদায়ী চেয়ারম্যান আবুল হাসেম পেয়েছেন ৩ হাজার ৮০৩ ভোট। এখানে ৪ হাজার ৩৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন রাজীব মোল্লা বাবু। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুর রহিম মোল্লা পান ৪ হাজার ১২ ভোট।
প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনের একটি কারণ বিদ্রোহী প্রার্থী। অনেকে তাদের মদদ দিয়েছে।
খানখানাপুর ইউনিয়নে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে। নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির আলী মোল্লা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩২৭ ভোট। চশমা নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন এ কে এম ইকবাল হোসেন। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আতিক আল আলম পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৬ ভোট। সেখানে প্রার্থী ছিলেন চারজন।
সার্বিক বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘এই ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট নই। প্রার্থী মনোনয়নে ভুল হয়নি। প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনের একটি কারণ বিদ্রোহী প্রার্থী। অনেকে তাদের মদদ দিয়েছে। আবার কোনো কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কৌশলে ভুল ছিল।’