রাজশাহীর বাজারে উঠেছে গোপালভোগ আম

নাটোরের চাষিরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আম না পাকায় তাঁরা পাড়েননি। আড়তগুলোতে

আমের বদলে তরমুজে ঠাসা।

রাজশাহীতে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া দিন থেকেই গোপালভোগ আম গাছ থেকে নামানো শুরু হয়েছে। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম। নগরের রায়পাড়া এলাকার এক বাগানে গতকাল শুক্রবার
ছবি: প্রথম আলো

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার থেকে গোপালভোগ আম বাজারে আসার কথা ছিল। কিন্তু নাটোরের আম মোকামগুলো ছিল আমশূন্য। চাষিরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আম না পাকায় তাঁরা পাড়েননি। তবে প্রথম দিন রাজশাহীর বাজারে প্রায় ১০০ মণ গোপালভোগ আম উঠেছে।

নাটোর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বুধবার আমচাষি, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিনিময় সভায় কখন কোন আম বাজারে আসবে, তা ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। ঘোষণা মোতাবেক গতকাল থেকে বাজারে গোপালভোগ আম আসার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল আমের বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত নাটোর স্টেশনবাজার, বাগাতিপাড়ার তমালতলা ও বড়াইগ্রামের আহম্মদপুর এলাকায় গিয়ে গোপালভোগ আমের দেখা মেলেনি।

নাটোর রেলস্টেশন এলাকার আমের মোকামে আম ছিল না। সেখানে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ
ছবি: প্রথম আলো

বেলা ১১টায় নাটোর রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশের ফল মোকামে গিয়ে দেখা যায়, কোনো আড়তেই আম আসেনি। প্রতিটি আড়ত ছিল তরমুজে ঠাসা। আড়তদারেরা সেখানে পাইকারি ও খুচরা তরমুজ বিক্রি করছিলেন। মজিবর রহমান নামের এক ফল ব্যবসায়ী জানান, আড়তে গোপালভোগ আম আসার কথা থাকলেও আমচাষিরা গাছ থেকে আম পাড়েননি।

পরে তমালতলা ও আহম্মদপুর মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানেও গোপালভোগ আম আসেনি। আড়তদারেরা আচারের জন্য কাঁচা আম বিক্রি করছেন। আহম্মদপুরের আমচাষি নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের এ সময় গাছে গোপালভোগ আম পাকতে শুরু করে। কিন্তু এবার আম পাকা শুরু করেনি। তাই তাঁরা আম পাড়েননি। গাছে পাকার অপেক্ষায় আছেন। এবার আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে কুঁড়ি হওয়া পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ছিল না। ফলে আম পরিপক্ব হতে দেরি হচ্ছে। আবার কয়েক দিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আশা করা যায়, সপ্তাহখানেক পর আম পাকতে শুরু করবে।

সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী উল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের আম পাকার হিসাব অনুসারে এবারও আম পাড়ার একটি তালিকা তৈরি করা হয়। চাষিরা আম না পাড়ার কারণে গোপালভোগ আম বাজারে আসেনি। তবে দু–এক দিনের মধ্যেই আড়তে গোপালভোগ আসবে।

গতকাল সকালে নিজের বাগান থেকে গোপালভোগ আম নামিয়েছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর এলাকার চাষি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাছে এবার আম খুব কম। তাঁর সাতটি গোপালভোগ জাতের গাছের মধ্যে তিনটিতে কয়েক দিন আগে আম পাকা দেখা গেছে। তাই এই তিনটির আম নামিয়েছেন। অন্য চারটি গাছের আম নামাবেন আরও এক সপ্তাহ পর।

পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মণ কাঁচা গোপালভোগ আম চাষিদের কাছ থেকে গতকাল আড়তগুলোতে কেনা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে। দু-এক দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

‘ফ্রুটস হান্ট’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে ফল বিক্রি করেন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, প্রথম দিনে বাজারে প্রায় ১০০ মণ গোপালভোগ আম এসেছে। তবে এর মধ্যে সব আম পাকা নয়। আগের দিনের ঝড়ে পড়া আমও রয়েছে। এখনো বাজারে ঢাকার ব্যবসায়ীরা আসেননি। আড়তগুলো খোলা হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যেই আড়ত খুলে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর ৯ উপজেলা ও মহানগরে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম হতে পারে।