রাজশাহী নগর
রাতের আঁধারে দিঘি ভরাট
সপুরা এলাকায় ‘শুকনা দিঘি’টির আয়তন ৯ বিঘা। স্থানীয় এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দিঘি ভরাটের এই অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহী মহানগর এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে রাতের আঁধারে দিঘি ভরাট করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দিঘি ভরাটের এই অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তারপরও ভরাট বন্ধ হয়নি। গত দেড় মাসে দিঘির একটি অংশ ভরাট করে কলাগাছ লাগানো হয়েছে।
নগরের সপুরা এলাকায় ৯ বিঘা আয়তনের জলাশয়টি স্থানীয়দের কাছে ‘শুকনা দিঘি’ বলে পরিচিত। নাম শুকনা দিঘি হলেও এতে পানি থাকে সারা বছর। দিঘিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। শহরের জলাধার সংরক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে ২২টি পুকুর ও দিঘি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে এই শুকনা দিঘির নামও রয়েছে। প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহাবুব সিদ্দিকীর দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে তিন মাসের জন্য নগরের পুকুরগুলো ভরাট স্থগিতের আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই রিটের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। এ পর্যন্ত পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চারটি মামলা করা হয়েছে। তারপরও নগরের বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ভরাট, দখল চলছেই।
নিজেকে ওই দিঘির মালিক দাবি করে নগরের সপুরা মিয়াপাড়া এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে হারুন অর রশিদ নামের এক ব্যক্তি গত বছরের ৩ জুন নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে তিনি নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সোবহান ওরফে লিটনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দিঘি দখলের অভিযোগ করেন।
যোগাযোগ করা হলে হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এই কাউন্সিলর দিঘির ভুয়া একজন মালিকের কাছ থেকে দেড় বিঘা অংশ কিনেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ও তাঁর আত্মীয়রা প্রায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ (আট কাঠা) জায়গা ভরাট করে দোকানঘর করেছেন ও গাছ লাগিয়েছেন।
হারুন অর রশিদ বলেন, যাঁরা পুকুরের মালিকানা দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁর আইনি লড়াই চলছে। দুইবার রায় তাঁর পক্ষে এসেছে। মালিকানার ভুয়া দাবিদারেরাই দিঘি ভরাটের চেষ্টা করছেন। হারুন দাবি করেন, এই পুকুর তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি। তাঁদের বংশের অন্তত ১২ জন এর মালিক। কিন্তু তাঁরা পুকুর ভরাট করছেন না। অন্য একটি পক্ষ পুকুর ভরাট করছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সোবহান ওরফে লিটন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দিঘি দখল বা ভরাট করেননি। কোনো পক্ষের কাছ থেকে দিঘির জায়গা কেনার অভিযোগও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন লোক বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে কিনে ভরাট করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা হয়তো দোকানপাট করবেন। সেই চেষ্টা করছেন। এই দিঘি সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত জলাশয়ের তালিকাভুক্ত। প্রকল্পটি পাস হলেই কোনো দখলদার থাকবে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজ। তা ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো পুকুর ভরাট করা হলে জেলা প্রশাসন দেখবে।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ বলেন, বিষয়টি তাঁদের কেউ লিখিতভাবে জানালে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
গত বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ওই জায়গায় দিঘির ভেতরে প্রায় ১০ ফুট চওড়া ও ৩০ ফুট দীর্ঘ এলাকা ভরাট করে কলাগাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হারুন অর রশিদের ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি দিঘির পাশেই। তিনি বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে ১৫টি ট্রাকে করে বালু এনে দিঘি ভরাট করার কাজ করা হচ্ছে। তিনি ওই সময় বিদ্যুৎ কার্যালয়ে ফোন দিলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। পরে তাঁরা থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে। পুলিশ দেখে পুকুর ভরাটের কাজে নিয়োজিত লোকজন পালিয়ে যান।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের (ডিভিশন–৩)–এর নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল আওলাদ বলেন, বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে পুকুর ভরাট করবে, এটা অসম্ভব ব্যাপার। এটা কখনোই হতে পারে না। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।