নৌযান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সুন্দরবনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে লঞ্চ
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নতুন প্রজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা মেনে আজ শুক্রবার সকালে পর্যটকবাহী লঞ্চ সুন্দরবনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল খুলনা বিআইডব্লিউটিএ।
খুলনা নদী বন্দরের বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক সকালে প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকের মৌখিক নির্দেশনা পেয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পর আজ সকালেে ট্যুরিস্টবাহী লঞ্চগুলো খুলনা থেকে ছেড়ে গেছে। তবে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও দুর্ঘটনা এড়াতে ট্যুরিস্ট অপারেটরদের জন্য ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপনে থাকা নির্দেশনার মধ্যে আছে, পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করতে হবে, প্রতিটি লঞ্চে ৭৫ জনের বেশি পর্যটক নেওয়া যাবে না, প্রত্যেক পর্যটকের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করবেন ট্যুর অপারেটররা, লঞ্চে ওঠানামার সময় প্রত্যেক পর্যটককে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে, নদীর মাঝখান থেকে কোনো পর্যটক যেন লঞ্চে না ওঠেন, তা ট্যুর অপারেটরদের নিশ্চিত করতে হবে এবং বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি ছাড়া কোনো লঞ্চ যেন সুন্দরবন ভ্রমণে না যায়, সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
ট্যুরিস্ট অপারেটরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে, বিশেষ করে ছুটির দিনে সাধারণত সুন্দরবনে পর্যটকেরা বেশি যান। ওই সময়ের জন্য আগে থেকেই সবার নৌযান বুকিং দেওয়া থাকে। যাঁরা বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে সুন্দরবনে যাবেন, তাঁরা বৃহস্পতিবার সকালেই বিভিন্ন জায়গা থেকে খুলনার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ ওই নিষেধাজ্ঞা ট্যুরস্ট অপারেটরদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
ট্যুরিস্ট অপারেটরা বলছেন, বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোথাও কোনো কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে যাত্রী সীমিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য না করে সরাসরি সুন্দরবনে যাওয়া ট্যুরিস্ট নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। বুধবার রাতে অনেকে ঘুমাতেও পারেননি।
ওই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বৃহস্পতিবার সকালেই বৈঠক করে ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুরিস্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন। ওই বৈঠক থেকে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুপুরেই সংগঠনের পক্ষ থেকে আবেদনপত্রটি প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন কারণে সন্ধ্যার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো চিঠি ইস্যু করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ। এমন পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সকালে নৌযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ট্যুর অপারেটরা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ট্যুরিস্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে করা আবেদনে সাড়া দিয়ে রাতেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়েছে। ওই নির্দেশনা পেয়ে সকালেই পর্যটক নিয়ে খুলনা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ২০টির বেশি লঞ্চ। এর মধ্য দিয়ে ট্যুর অপারেটরদের দুদিন ধরে চলা দুচিন্তার অবসান হলো।