রানীনগরে ৪ পরিবারকে ৭ মাস ধরে একঘরে করে রাখার অভিযোগ
নওগাঁর রানীনগরে জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে চারটি পরিবারকে সাত মাস ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইটের প্রাচীর দিয়ে পরিবারগুলোর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিকার চেয়ে ওই চার পরিবার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পায়নি।
উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের বড়খোল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। একঘরে হয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা বলেন, বড়খোল উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ ছিল। পরে গ্রামের মাতবর ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ওই জমি ছেড়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে পাশের খাস জমিতে বসতি স্থাপনের জন্য তাঁদের প্রস্তাব দেন।
ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত বছরের জুন মাসে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন, আবদুল করিম, রিয়াজুল ইসলাম, বেলাল হোসেনসহ স্থানীয় লোকজন ছামছুর দেওয়ানের পরিবারের সদস্য মোমেনা বিবির দোকানঘর ভেঙে দেন। এ ঘটনায় ছামছুর দেওয়ানের চাচা রমজান আলী আদালতে মামলা করেন। মামলার পর মাতবরের লোকজন ছামছুর দেওয়ান, ভাই উজ্জ্বল দেওয়ান, শরিকান রমজান দেওয়ান, মোমেনা বিবিসহ চার পরিবারকে একঘরে করে দেন।
ছামছুর দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, রিয়াজ দেওয়ান নামের মাতবরের এক লোক এসে ছামছুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনকে একঘরে করে রাখার বিষয়টি জানিয়ে দেন। এ ছাড়া ওই গ্রামের সবাইকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে ও তাঁদের কাছে দোকানের পণ্য বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়। এমনকি তাঁরা মসজিদে নামাজও পড়তে পারবেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্দেশনা ভঙ্গ করলে জরিমানা করা হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনার পর থেকে গ্রামের লোকজন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন না এবং দোকানের পণ্য বা ওষুধও বিক্রি করেন না। এ ছাড়া তাঁদের বাড়ির সামনে দেয়াল স্থাপন করায় তাঁদের দেয়াল টপকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
একঘরে করে রাখার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানানোর অপরাধে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই চার পরিবারের সদস্য রমজান ও কালামকে মাতবরের লোকজন বেধড়ক মারধর করেছেন বলেও দাবি করেন ছামছুর দেওয়ান। গুরুতর আহত রমজানকে প্রথমে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে গত বছর ছামছুর দেওয়ান জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। ওই বছরের ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসক রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর ইউএনও ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে উভয় পক্ষকে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু এরপরও উভয় পক্ষ তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন, একঘরে করে রাখার অভিযোগটি মিথ্যা। ছামছুর দেওয়ানসহ তাঁদের পরিবারের লোকজন ভালো মানুষ নন। গ্রামের লোকজন তাঁদের পছন্দ করেন না, তাই তাঁদের সঙ্গে কেউ কথাও বলেন না।
ছামছুর দেওয়ানের বাড়ির সামনে দেয়াল স্থাপনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (ছামছুর দেওয়ান) নিজেরাই নিজেদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করেছেন। আমরা তাঁদের পথ বন্ধ করিনি।’
ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুই পক্ষকে আমার দপ্তরে ডেকেছি। আশা করছি, তাঁরা আসবেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।’
জানতে চাইলে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মতা শাহিন আকন্দ বলেন, ৯৯৯–এ কল পেয়ে আজ সোমবার দুপুরে পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়েছিল। দুই পক্ষকেই বিরোধ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।